বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় কবে?

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২১ ১৩:২১

বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও বিগত ১৪ বছরেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। সচিবালয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে জায়গা নির্ধারণ করে এর ফলক উন্মোচন হয়েছে, কিন্তু কাজ আর এগোয়নি।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগ পৃথককরণের পর দেশের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ওপর বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। এটা বিচার বিভাগ পৃথককরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।

তবে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও বিগত ১৪ বছরেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। সচিবালয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে জায়গা নির্ধারণ করে এর ফলক উন্মোচন হয়েছে, কিন্তু কাজ আর এগোয়নি।

আইনজ্ঞরা বলছেন, কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও বাস্তবে এখনও আইন মন্ত্রণালয় ও সরকারের মুখাপেক্ষি হয়ে আছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে সব কিছুই এখন সুপ্রিম কোর্টের অধীনে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা পায় নাই। সরকার এটাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। মাসদার হোসেন মামলার আলোকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বার বার তাগিদ দিলেও পরে আর সেটি টিকল না। পৃথক সচিবালয় থেকে শুরু করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বার বার সিনহা সাহেব তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হয়নি।

‘সিনহা সাহেব চেষ্টা করেছিলেন। পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হয়ে আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া সরকার যেভাবে চাইল সেভাবে করে দিলেন। মামলাটি সেখানে সমাপ্তি হলো। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’

তিনি বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে খুব বেশি পরিবর্তন আমরা করতে পারি নাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি রিভিউ করে, তাহলে হয়তো ফিরিয়ে আনা সম্ভব, কিন্তু এখন যা অবস্থা, রিভিউ করলেও কাজ হবে না। এখন হলো সরকার যেভাবে চায়, আমাদের আইন আদালত অনেকাংশে সেভাবে চলছে।’

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিচার বিভাগ সত্যিকার অর্থে যেভাবে পৃথক হওয়ার দরকার ছিল সেভাবে তো হয় নাই। নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‍শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় যে খসড়া করেছিল, আপিল বিভাগ তাতে আপত্তি দিয়েছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন টানাপোড়নে সেটি আর হলো না।

তিনি আরও বলেন, ‘এরপরে যেটা হয়েছে, সেটা তো মন্ত্রণালয়ের এক ধরনের কর্তৃত্ব রেখেই করা হয়েছে। পরে অবশ্যই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়ার সময়ে সেটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কাজেই তারা (আইন মন্ত্রণালয়) বলতে পারে, এটি সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মাসদার হোসেন মামলার আলোকে যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেটি আসলে হয়নি বলেই আমার মনে হচ্ছে।

‘আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব কিছুটা হলেও লাঘব হতো, যদি বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় থাকত, এটি যদি প্রধান বিচারপতির অধীনে থাকতো।’

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এই যে কর্তৃত্ব, এর আগে কয়েক জনের বদলির ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্ট একটা নির্দেশনা দিল। তার মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের যেগুলা পছন্দ হয়, সেগুলোর বিষয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। আর যেগুলা পছন্দ হয় না, সেগুলার ছয় মাসেও চিঠি ইস্যু হয় না। এই টেকনিক্যাল বিষয়গুলো থাকত না, যদি না বিচার বিভাগের জন্য প্রধান বিচারপতির অধীনে পৃথক সচিবালয় থাকত। তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যেত।’

তবে সচিবালয় ছাড়া বাকি সবই এখন সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, পর্যায়ক্রমে সচিবালয়ও হবে। সুপ্রিম কোর্ট যখন তাদের সক্ষমতা তৈরি হবে, তখন হবে।

তিনি বলেন, সচিবালয় ছাড়া বাকি সবই এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে। বিচারকদের বদলি, পদায়ন সব কিছুই সুপ্রিম কোর্টের অধীনে হচ্ছে।

নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করার লক্ষ্যে ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার আদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

১২ দফা নির্দেশনায় যা ছিল

বিচার বিভাগ পৃথককরণে সু্প্রিম কোর্টের দেয়া ১২ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে:

০১. সংবিধানের ১৫২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের কাজ সার্ভিস অফ রিপাবলিকের ভেতরে পড়বে। তবে বিচার বিভাগের কাজ ও অবকাঠামোর সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসের অনেক ভিন্নতা রয়েছে। বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একত্রিত করা যাবে না।

০২. বিচারিক (জুডিশিয়াল) ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না। সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের পদ সৃষ্টি, নিয়োগ পদ্ধতি, নিয়োগ বদলিসহ অন্যান্য কাজের বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারবেন।

০৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী সব ম্যাজিস্ট্রেটকে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ দেয়া হয়। একসঙ্গে নিয়োগ দেয়া সংবিধান পরিপন্থি।

০৪. এই রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা এবং কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। এই কমিশনে নারী ও পুরুষ বলে কোনো বৈষম্য থাকবে না।

০৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগের সবার চাকরির বিধিমালা (নিয়োগ, পদায়ন, বদলি পদোন্নতি ও ছুটিসহ অন্যান্য) প্রণয়ন করবেন।

০৬. সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন করবেন।

০৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে।

০৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবে।

০৯. বিচার বিভাগের (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হাত থাকবে না। এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন এবং বরাদ্দ করবে।

১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন।

১১. এই রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথককরণের জন্য সংবিধানে কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। তবে পৃথককরণ আরও অর্থবহ করতে যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে তা করা যাবে।

১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন বিচার বিভাগের সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ না করবে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান অবকাঠামো অনুযায়ী তার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।

এ বিভাগের আরো খবর