বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাহাড়ের বুকে কফি চাষ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:১৫

চাষিরা জানান, দেশে রোবস্ট ও অ্যারাবিক নামে দুই ধরনের কফি চাষ হচ্ছে। এসব কফির খোসাসহ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। একটি গাছে বছরে ৫ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত কফি ফল পাওয়া যায়। একবার ফলন দেয়া শুরু করলে একটানা ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত কফি পাওয়া যায়।

পানীয় হিসেবে কফি সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও কফির জনপ্রিয়তা কম নয়। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বাড়ছে চাহিদা।

তবে দেশে পাওয়া অধিকাংশ কফিই আমদানি করা। সেই জায়গা থেকে সরে নিজেরাই কফির চাহিদা মেটানোর সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশের পার্বত্যাঞ্চল।

ভালো দাম পাওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে অনেকেই জুমের চাষের পরিবর্তে করছেন কফির আবাদ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সফলতা এসেছে বান্দরবান জেলায়।

স্থানীয়রা জানান, বান্দরবানে জুম চাষের জমি দিন দিন কমে যাওয়ায় অনেক চাষিই এখন ঝুঁকছেন ফলদ ও অর্থকরী ফসলের দিকে। সেখান থেকেই এসেছে কফি চাষের ধারণা। কারণ বান্দরবানের পরিবেশ কফি চাষের জন্য উপযোগী।

বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় চিম্বুক পাহাড়ে কফি চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নের জাল বুনছেন ঙুই ইন ম্রো, ইয়াঙ সম ম্রো, রুম ক্লাম ম্রো, মেন রুম ম্রো, রেন নক ম্রোসহ অনেকে।

কফি চাষি ঙুই ইন ম্রো নিউজবাংলাকে জানান, গত বছর ২০০ টাকা কেজি দরে ১৫ কেজি কফি বিক্রি করেছিলেন। চলতি বছর তার আরও প্রায় ২০০ কফি গাছে ফলন এসেছে। এ বছর ৩০-৪০ কেজি কফি পাওয়ার আশা করছেন।

যদি প্রতি গাছ থেকে দুই কেজি করে কফি পান; কেজি ২০০ টাকা হিসেবে তার আয় হবে দুই লাখ টাকা।

কফি চাষের বিষয়ে তিনি জানান, কফির চারা লাগানোর দুই বছর থেকে ফলন দেয়া শুরু করে। তৃতীয় বছর থেকে পুরোদমে ফল দেয়। গাছ ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

সাধারণত জানুয়ারিতে ফুল আসে, সপ্তাহখানেক পর ফলে পরিণত হয়। নভেম্বরের শেষ দিকে কফি ফল পাকা শুরু করে। এরপরই তারা ফল সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত শুরু করেন।

নিজের বাগান নিয়ে ঙুই ইন ম্রো বলেন, ‘বর্তমানে এক একরের বাগানে আমার এক হাজার গাছ আছে। সব গাছ থেকেই ফলন পাওয়ার অপেক্ষা করছি। পাশাপাশি আরও ৩-৪ হাজার গাছ লাগাতে চাচ্ছি। তবে চারা পাচ্ছি না। এ জন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতা দরকার।’

চিম্বুক ও ফারুক পাড়ায় পরিদর্শনে দেখা যায়, আম, জাম্বুরা বিভিন্ন ফলদ বাগানের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে কফি চাষ করা হচ্ছে।

চাষিরা জানান, কফির চারা বর্ষা মৌসুমে রোপণ করতে হয়। গাছের ছায়া ও মাটির আর্দ্রতা লাগে। আবার বেশি ছায়া হলেও ফলন কম হয়। সে জন্য রোদও লাগে। ফলদ গাছের সঙ্গে কফিগাছের জন্য উপযোগী রোদ-ছায়ার পরিবেশ পাওয়া যায়।

তারা আরও জানান, দেশে রোবস্ট ও অ্যারাবিক নামের দুই ধরনের কফি চাষ হচ্ছে। এসব কফির খোসাসহ কেজি বিক্রি হয় ২০০-২৫০ টাকায়। একটি গাছ থেকে বছরে ৫ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত কফি ফল পাওয়া যায়। একবার ফলন দেয়া শুরু করলে একটানা ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত কফি পাওয়া যায়।

বান্দরবান জেলায় কফি চাষের অগ্রপথিক হিসেবে পরিচিত তৈদু রাম ত্রিপুরা ১২ বছর ধরে কফি চাষ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে কফি চারা উৎপাদন-রোপণ, পরিচর্চা, উৎপাদন ও বিপণন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে কফি চাষ করেছেন।

তৈদু রাম জানান, সারা বিশ্বে কফির দাম মূলত একই রকম থাকার কারণে সিন্ডিকেটের প্রভাব নেই। এ কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পেয়ে থাকেন। দেশে একমাত্র কফি ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান নর্দান অ্যান্ড কফি রোস্ট কোম্পানির সঙ্গে তিনি স্থানীয় কফি চাষিদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন।

এখন চাষিরা কফি খোসাসহ প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং খোসা ছাড়া ৩৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন।

দেশে কফি আমদানির বিষয়ে তিনি জানান, দেশে কফির চাহিদা প্রতি তিন মাসে ৫-৬ টন। দেশে চাহিদার তুলনায় কফি উৎপাদন হয় খুবই কম। এ জন্য ইথিওপিয়া, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কফি আমদানি করা হয়।

বালাঘাটা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক উদ্যানতত্ত্ববিদ ড. সাফায়েত আহমদ সিদ্দিকী জানান, এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্র থেকে ৬৫ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হয়েছে ৯ হাজার ৭৫০টি অ্যারাবিক কফির চারা।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম শাহ্ নেয়াজ জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবায়ু ও মাটির কারণে পাহাড়ি এলাকা কফি চাষের উপযোগী। বিশেষ করে পরিকল্পিতভাবে লাগানো পুরোনো আমবাগানে কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কারণ কফিগাছের ছায়ায় ভালো হয়।

তিনি আরও জানান, বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি ও লামা উপজেলায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৪৬ হেক্টর জমিতে কফি চাষ করা হয়েছে। জেলায় পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ হচ্ছে ২০০ একর জায়গায়। ফল পাওয়া যাচ্ছে ২০ হেক্টর জায়গায়। এসব জমি থেকে গত বছর খোসাসহ কফি উৎপাদন করা হয়েছে ৩৪ টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত ৬২৫ জন কৃষককে দেয়া ৩৭ হাজার ২০০ চারা। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের দেয়া হয়েছে কৃষি উপকরণ। এ ছাড়া গত বছর যেখানে ৪৮টি কফি চাষের কৃষি প্রদর্শনী প্লট ছিল, এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ২১৫টি।

কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য কফি প্রক্রিয়াকরণ মেশিনও দেয়া হয়েছে। আর বান্দরবানে কফি ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের মানুষ কফি পানে অভ্যস্ত কম হওয়ার কারণে উৎপাদিত কফি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব। প্রচুর মানুষেরও কর্মসংস্থান হবে। সেই লক্ষ্য পূরণে বান্দরবান কৃষি বিভাগ চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর