করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের ৮৬ শতাংশ তরুণ ইন্টারনেটে আরও বেশি সময় কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ তরুণ দিন-রাত সব সময়ই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ১৫ শতাংশ সন্ধ্যায় আর ২ শতাংশ শুধু স্কুল চলাকালে ইন্টারনেট চালু রাখেন।
করোনার পরিপ্রেক্ষিতে তরুণদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার ও অনলাইন বুলিং কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল একটি জরিপ করেছে। সেই জরিপেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।
চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরজুড়ে এই জরিপটি পরিচালিত হয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে।
বাংলাদেশে জরিপের ফলাফল সম্পর্কে গ্রামীণফোনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৮৬ শতাংশ তরুণ কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে ইন্টারনেটে আরও বেশি সময় কাটাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ৩৫ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, তারা সারাক্ষণই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর ১৫ শতাংশ মূলত সন্ধ্যায় ইন্টারনেটে থাকেন। ২ শতাংশের ইন্টারনেট ব্যবহার হয় স্কুলের সময়টিতে।
জরিপে ৩ হাজার ৯৩০ জন অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ছিলেন বাংলাদেশি তরুণ। এদের ৮৫ শতাংশের মতে, অনলাইন বুলিং বা হয়রানি একটি মারাত্মক সমস্যা। দেশে বর্তমানে ডিজিটাইজেশনের যে ধারা দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বিষয়টির দিকে নজর রাখা এবং সচেতনতা তৈরির গুরুত্বও এখন অনেক বেড়েছে বলে মনে করেন তারা।
জরিপে অংশ নেওয়া দেশের ২৯ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের আগেই তারা বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন; যেখানে ১৮ শতাংশ জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর থেকে তারা আরও বেশি অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশের ৮ শতাংশ তরুণ সপ্তাহে অন্তত এক বা একাধিকবার অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপস এবং অনলাইন গেমিং ও ভিডিও গেম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম– এই তিনটি মাধ্যমে সাধারণত তরুণরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
জরিপ চিত্র
চারটি দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা অনলাইনে বুলিং থামাতে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে বুলিংকারীকে উপেক্ষা করা, যার ফলে ওই ব্যক্তিকে থামানো সম্ভব হয়; সিকিউরিটি সেটিংস পরিবর্তন করা, যাতে উত্ত্যক্তকারী ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন এবং মা-বাবা বা অভিভাবকের সঙ্গে এ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, ‘বুলিং সমস্যা দূর করার জন্য আমরা টেলিনর ও ইউনিসেফের মতো পার্টনারদের সহযোগিতায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনলাইনে নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন এবং তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। এ জন্য তাদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে আমাদের আরও দৃঢ় সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব ও প্রতিশ্রুতি নিতে হবে।’
এ সম্পর্কে সাস্টেইনেবিলিটি ফর টেলিনর ইন এশিয়ার ভিপি মনীষা দোগরা বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি চলাকালে তরুণদের ইন্টারনেটে সময় কাটানোর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে অনলাইনে তাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখার উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার প্রয়োজনীয়তাও আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সচেতনতা, অনলাইন বুলিং সম্পর্কে প্রশিক্ষণ এবং ডিজিটাল রেজিলিয়েন্স তৈরি– এসব বিষয় সম্পর্কে সব অংশীজনদের কাজ করা প্রয়োজন। এটি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন।’
জরিপে অনলাইনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে তরুণরা আরও কী কী নির্দেশিকা ও প্রশিক্ষণ চান, সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়েছিল। তরুণরা অনলাইনে হয়রানি মোকাবিলায় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসের কথা বলেছন ৫৬ শতাংশ। অনলাইনে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন ৪৬ শতাংশ।
এ ছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের ৪০ শতাংশ মেসেজিং অ্যাপে অনলাইন বুলিং থেকে সুরক্ষা পেতে এবং ৩৭ শতাংশ গেমিং ও স্ট্রিমিং ভিডিও গেমসের সময় অনলাইন বুলিং প্রতিহত করতে আগ্রহী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইন্টারনেটে তরুণ ব্যবহারকারীদের অনলাইন কার্যক্রম সুরক্ষিত করা গ্রামীণফোনের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য। শিশু ও তরুণদের অনলাইনে সুরক্ষিত রাখতে গ্রামীণফোন ২০১৬ সাল থেকে তার পার্টনার ও কমিউনিটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ডিজিটালি রেজিলিয়েন্ট ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত প্রজন্ম গড়ে তুলতে গ্রামীণফোনের জনসচেতনতামূলক উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টারনেটের দুনিয়ায় জানতে হবে, কোথায় আপনার থামতে হবে’, ‘বি স্মার্ট ইউজ হার্ট’, ‘ঠিক লাইনে অনলাইনে’। পাশাপাশি, অনলাইন ট্রেইনিং কারিকুলাম ‘ডিজিওয়ার্ল্ড’ এবং ব্র্যাক ও ইউনিসেফের মতো সংস্থার সঙ্গে পরিচালিত স্কুল আউটরিচ প্রোগ্রামও চলমান রয়েছে।