বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। কিন্তু এর জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তা নেই। বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে দেশে একটি গতিশীল বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে হবে। এতে বিনিয়োগের জন্য ঋণ প্রাপ্তি আরও সহজ হবে।
রোববার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনে এক ওয়েবিনারে এ কথা বলেন তিনি। ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ঘাটতি পূরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সালমান এফ রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)-এর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এর আগে গত রোববার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২১ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সম্মেলন শেষ হবে।
উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকার বেসরকারি খাতকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন তখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বিমান, টেলিফোন, ব্যাংক, বিমা খাতকে বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করেন। এর সুফল আমরা এখন পাচ্ছি।’
তিনি জানান, গত এক যুগে দেশের মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণ বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ২৭ ডলার। এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মোট দেশজ উৎপাদন, জিডিপি প্রভৃতি ক্ষেত্রেও দেশের অগ্রগতি লক্ষণীয়।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই বলছে, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। সহসাই উন্নয়শীল দেশে যাবে। স্বপ্ন এখন উন্নত বিশ্বের। এ জন্য নতুন ধারণা, নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। আর দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ খুবই জরুরি।’
বিশেষ অতিথি নজিবুর রহমান দেশের অবকাঠামো খাতের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের প্রচুর মূলধন দরকার। কিন্তু প্রচলিত ব্যবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ সহায়তার সুযোগ সীমিত। এ জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে।
অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ অবকাঠামো খাতকে অর্থনীতির মেরুদণ্ড আখ্যা দিয়ে বলেন, এ খাতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের প্রয়োজন।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি জানান, বর্তমানে জিডিপির ৪ শতাংশ অবকাঠামো খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। অথচ, প্রতিবেশি দেশগুলোতে ডিজিপির প্রায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়। দেশে বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হলে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতেই হবে।
বেসরকারিকরণ শক্তিশালী করতে একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ব্যাংকসমূহে প্রচুর অলস টাকা রয়েছে। যদি আমরা এ ধরনের অলস টাকা বন্ডে স্থানান্তরিত করতে পারি, তাহলে দেশের অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে উপকৃত হবে।’
ওয়েবিনারে বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান এন্ড্রু বেনব্রিজ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং হেড অফ ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট মুহিত রহমান, মেটলাইফ বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম আলা আহমেদ, এফসিএ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং টেকনাফ সোলারটেক-এর ব্যবস্থপনা পরিচালক নূহের লতিফ খান প্রমুখ।