শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ভর্তি ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা বলছেন, কোনো প্রকার রসিদ ছাড়াই বোর্ডের নির্ধারিত ফির চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. মনিরুজ্জামান জানান, পরীক্ষার্থীদের আনুষঙ্গিক কাজে ব্যবহার হয় বাড়তি টাকা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তৃতীয় সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্র ও বোর্ড ফি বাবদ ৬৭৫ টাকা নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে নেয়া হয় ২৫০০ টাকা। বাড়তি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এবার টাকা নেয়ার রসিদও পাইনি।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘গত সেমিস্টারে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে রসিদ দিয়েছিল। কিন্তু এবার টাকা জমা দেয়ার এক মাস পেরোলেও রসিদ দেয়া হয়নি। রসিদ চাইতে গেলে তারা বলে, বই শেষ। নতুন রসিদ বই এলে দেয়া হবে।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রতি সেমিস্টারে আমাদের কাছ থেকে ২৫০০ টাকা নেয়া হতো। পঞ্চম সেমিস্টারে এসে জানতে পারি, প্রথম থেকে তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত বোর্ডের নির্ধারিত ফি ৬৭৫ টাকা। আর চতুর্থ সেমিস্টার থেকে (বোর্ড ফি ৪৭৫+কেন্দ্র ফি ৪৫০) ৯২৫ টাকা।
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে বাড়তি টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে ২৫০০ টাকার হিসাব দেয়। এসব খরচের মধ্যে দেখানো হয়েছে ফটোকপি বাবদ ৪০০ টাকা। অথচ আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফটোস্ট্যাট মেশিন আছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এখানে হল ইনভিজিলেটর হিসেবে যিনি আসেন তাকে টাকা দিতে হয়, ম্যাজিস্ট্রেট এলে তাকেও টাকা দিই, হল সুপারভাইজার যিনি থাকেন তিনিও টাকা নেন। এ ধরনের অনেক খরচ আছে। বাড়তি টাকা এসব কাজে ব্যবহার হয়।’
এবার রসিদ কেন দেয়া হয়নি, সে প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ‘বই শেষ হয়ে গেছে, তাই রসিদ দেয়া হয়নি। বইয়ের অর্ডার দেয়া হয়েছে। চলে এলে রসিদ দেয়া হবে।’
অভিযোগ আরও আছে
কিশোরগঞ্জ মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাসে থাকেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তার এক গাড়িচালক। তিনি কেবল সেখানে থাকেনই না, রান্না করার জন্য ব্যবহার করেন বৈদ্যুতিক চুলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে বাস করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পালের গাড়িচালক।
এখানে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার এখানে থাকতে বলেছেন বলেই থাকি। মাঝেমধ্যে বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করে রান্না করি। এই বিষয়টাও স্যার জানেন।’
এদিকে অধ্যক্ষের জন্য বরাদ্দ বাসভবনে গিয়ে দেখা যায় সেটি তালাবদ্ধ। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে থাকলে প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে হয়। ডরমিটরিতে থাকলে সে টাকা বেঁচে যায়। অধ্যক্ষ ডরমিটরিতেই থাকেন।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘একজন অধ্যক্ষের থাকার জন্য সরকারি হিসেবে ১৫০০ স্কয়ার ফিটের বাসা দরকার। এই বাসভবনটি ১৩৫০ স্কয়ার ফিটের। রুমগুলো মুরগির খোপের মতো। আর যেহেতু আমার পরিবার সঙ্গে নেই, তাই ওই বাসভবনে থাকছি না।’