একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজে কালো রঙের ওয়াকিটকি ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। তবে একটি চক্র অবৈধ উপায়ে এই কালো রঙের ওয়াকিটকির সরঞ্জামাদি আমদানি করে রাজধানী ঢাকায় ওয়াকিটকি তৈরি করে তা বিক্রি করত। আর এই ওয়াকিটকি ব্যবহার হয় অবৈধ কাজে।
রোববার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর সায়দাবাদ, মনিপুরীপাড়া, রাজারবাগ ও শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে ৩১৭টি অবৈধ ওয়াকিটকি সেট ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শনিবার বিকেল ৪টা থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত র্যাব-১০ বিটিআরসির সহযোগিতায় ওয়াকিটকি সেটের অবৈধ আমদানি, মজুত, বিক্রি, বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, ইজারারোধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩১৭টি অবৈধ ওয়াকিটকি সেট ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করে র্যাব। ছবি: নিউজবাংলা
এই অভিযানে অবৈধ ৩১৭টি বিভিন্ন প্রকার ওয়াকিটকি সেট, ১১৬টি মোবাইল ও পাঁচ হাজার ২৪৪টি বিভিন্ন প্রকার এক্সেসরিস জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মেহেদী হাসান, সাদিক হাসান, মো. ফয়সাল, তালিবুর রহমান ও ফারুক হাসান।
তাদের মধ্যে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে ২২৪টি ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট, ফারুক হাসানের কাছ থেকে ৩০টি ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট এবং পলাতক গোলাম মোহাম্মদ ফেরদৌসের বাসা থেকে ৬৩টি ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ধারা ৫৫(৭) অনুযায়ী ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য কোনো প্রকার লাইসেন্স বা তরঙ্গ গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া একই আইনের ৫৭(৩) ধারা অনুযায়ী ওয়াকিটকি আমদানি করার আগে বিটিআরসি থেকে অনাপত্তি গ্রহণের নিয়ম থাকলেও গ্রেপ্তারকৃতরা নিয়ম ভেঙে অবৈধভাবে ওয়াকিটকিগুলো আমদানি করেছেন এবং বিক্রি করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা চট্টগ্রামের কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে বিদেশ থেকে দীর্ঘ এক বছর ধরে লাইসেন্স ব্যতীত ওয়াকিটকি সেট ও সরঞ্জামাদি অবৈধ পথে সংগ্রহ করে আসছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আটককৃতদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তারা আনুমানিক এক হাজার ১৫০টি ওয়াকিটকি সেট অবৈধ কেনা-বেচা ও ইজারা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ওয়াকিটকি সেট ও প্রয়োজনীয় তরঙ্গ ব্যবহারের লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে সরকার যে রাজস্ব আদায় করত তা থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে।’
মূলত সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা অবৈধ উপায়ে জব্দকৃত ওয়াকিটকি সেট ও সরঞ্জমাদি আমদানি করেছেন।
অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারকৃতরা দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের কাছে কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট বিক্রি করেছে যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই ধরনের অবৈধ ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধী চক্র ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ করে থাকে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ধরনের অবৈধ ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধী চক্র ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ বহুবিধ অপরাধ করে থাকে। বিভিন্ন সময় ভুয়া র্যাব কিংবা পুলিশ সদস্য আটকের পর এই ধরনের ওয়াকিটকি সেট জব্দ করার ঘটনা ঘটছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিটিআরসির উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট ও ইন্সপেকশন) এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াও অবৈধভাবে তরঙ্গ ব্যবহার করা সম্ভব। তবে বিটিআরসি নিয়মিত অভিযান ও মনিটরিং করে থাকে। যারা অবৈধভাবে তরঙ্গ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কালো ওয়্যারলেস সেট ব্যবহার সাধারণদের সুযোগ নেই। তারপরও বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের সেট ব্যবহারের অভিযোগ পাই। এই ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিটিআরসি কাজ করছে। ঢাকা ছাড়াও দেশের ৫টি স্থানে আমাদের মনিটরিং স্টেশন আছে।’
বিভিন্ন গার্মেন্টস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল কর্তৃপক্ষ ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে থাকে। ওয়াকিটকির অবৈধ ব্যবহার বন্ধে সচেতনতার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে, যোগ করেন তিনি।