সিগারেটের ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে ইংল্যান্ডে শিগগিরই অনুমোদন পেতে যাচ্ছে ই-সিগারেট। দেশটির মেডিসিন অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি এ সংক্রান্ত হালনাগাদ সুপারিশ প্রকাশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে।
এই সুপারিশ অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) নীতিতে সিগারেট-আসক্তি দূর করতে ই-সিগারেটকে উৎসাহিত করা হবে। আর এটি ঘটলে ইংল্যান্ডই হবে বিশ্বের প্রথম দেশ, যেখানে সরকারিভাবে ই-সিগারেট ‘চিকিৎসা পণ্যের’ স্বীকৃতি পাবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য ভ্যাপিং বা ই-সিগারেটের ক্ষতির দিক সম্পর্কে এখনও কঠোর অবস্থানেই রয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভ্যাপ শরীরের জন্য পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত না হলেও এটি প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। ‘ভ্যাপিং ইন ইংল্যান্ড: ২০২১ এভিডেন্স আপডেট সামারি’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের প্রায় আট মাসের মাথায় গভ ডটইউকে ওয়েবসাইটে ই-সিগারেট অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয় ২০৩০ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত ইংল্যান্ড গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নেই ই-সিগারেটকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভ্যাপের উপাদান উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের তদারকিতে থাকবে।
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ড্রাগওয়াইজ-এর পরিচালক হ্যারি সাপিরো কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভাইসকে বলেন, ‘বিজ্ঞানকে অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য জনস্বাস্থ্যের সুবিধা বিবেচনায় ভ্যাপিংয়ের বিষয়ে একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে অগ্রগামী হয়েছে।’
‘ভ্যাপিং ডিভাইসগুলো যুক্তরাজ্যে সহজলভ্য, যদিও প্রেশক্রিপশন থেকে আরও বেশি মানুষ উপকৃত হতে পারবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এটি চিকিৎসক ও ধূমপায়ী- উভয়ের কাছে বার্তা পাঠাবে যে, ধূমপানের চেয়ে ভ্যাপিং উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নিরাপদ। ধূমপায়ী মানুষকে তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে, এমনকি জীবন বাঁচাতে অভ্যাস পরিবর্তনে উৎসাহিত করা উচিত।’
ভ্যাপের ক্ষেত্রে তরলকে গরম করে ধোঁয়া গ্রহণ করা হয়। এতে টার (তামাকের কাত্থ) বা কার্বন মনোক্সাইড থাকে না, যেগুলো তামাকের সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান। তবে ই-সিগারেটে আসক্তি তৈরির নিকোটিন থাকে।
যুক্তরাজ্যে ধূমপায়ীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। গত দুই দশকে ধূমপায়ীর হার ২৭ থেকে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশটিতে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ হাজার মানুষ ধূমপানজনিত রোগে মারা যান।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীর মধ্যে ৩৬ লাখ ই-সিগারেট ব্যবহার করছেন, যাদের বেশির ভাগই আগে প্রচলিত সিগারেটে আসক্ত ছিলেন। অনেকরই ধারণা, ধূমপান ত্যাগ করার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হল ভ্যাপ।
যুক্তরাজ্যের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্যার নরম্যান ল্যাম্ব মনে করছেন, ‘ই-সিগারেট সরকারি অনুমোদন পেলে সেটি হবে একটি গেম চেঞ্জার।’ অন্যদিকে, দেশটির বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘এনএইচএস-এ লাইসেন্সের মাধ্যমে ই-সিগারেটের দরজা খোলার মাধ্যমে সারা দেশে ধূমপানের হারে বৈষম্য মোকাবিলার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে মানুষ যেখানেই থাকুক এবং তাদের পটভূমি যাই হোক, ধূমপান বন্ধে আমাদের সহায়তা করবে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভ্যাপিং সুরক্ষা বিতর্কের মুখে পড়ায় এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তবে ভ্যাপবিরোধী অবস্থানে এখনও অনড় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির প্রধান গত জুলাইয়ে ভ্যাপকে ‘ক্ষতিকারক’ আসক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন এটি তারা শিশুদের তামাকের ধোঁয়া গ্রহণের সিঁড়ি হিসেবে কাজ করছে।
অবশ্য এই অভিযোগ নাকচ করে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক জন ব্রিটন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও তামাকের ধোঁয়ায় আসক্তি এবং নিকোটিনে আসক্তির মৌলিক পার্থক্য করতে পারছে না। তামাকের ধোয়া প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়, নিকোটিন যেটি ঘটায় না।’