স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নথি উধাওয়ের ঘটনায় তদন্তের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে জিজ্ঞাসা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি যাদের নিয়েছে তাদের মধ্যে আছেন সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের ২৯ নম্বর কক্ষের ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদার এবং সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা। বাকি চারজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
রোববার বিকেলে বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি নথি গায়েবের ঘটনায় সকালে সচিবালয়ে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। এরপর ওই বিভাগের ছয় কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি কার্যালয়ে আনা হয়।
তাদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনও তাদের কাউকে আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এর আগে সকালে সচিবালয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে সিআইডির পুলিশ সুপার কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি দল। তাদের সঙ্গে ছিলেন শাহবাগ থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য।
সিআইডির পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসেছি ছায়া তদন্ত করতে। তদন্ত শেষে আমরা এ বিষয়ে হয়তো আরও বলতে পারব।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ২৯ নম্বর কক্ষ থেকে ১৭টি নথি হারানোর কথা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জিডি সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অফিস করে নথিগুলো ফাইল ক্যাবিনেটে রাখেন। পরবর্তী সময়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে কাজ করতে গিয়ে দেখেন ফাইলগুলো ক্যাবিনেটে নেই।
উপসচিব নাদিয়া হায়দার শাহবাগ থানায় জিডিটি করেন। বৃহস্পতিবার জিডি হওয়ার পরই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
নথি হারালেও সমস্যা নেই
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ১৭ নথি উধাও হলেও তাতে কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব মো. নুর আলী।
সচিবালয়ে তার নিজ কক্ষে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ কথা জানান। বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে এই নথিগুলোর কপি আছে।
নুর আলী বলেন, ‘যে ফাইলগুলো হারানো গেছে, সেগুলো মন্ত্রণালয়ের ছোটোখাটো ক্রয়সংক্রান্ত। তবে এগুলোর কপি ডিজি অফিসে আছে। তাই এগুলো হারানো গেলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবুও আমরা জানতে চাই কে, কেন, কী উদ্দেশ্যে এগুলো সরিয়েছে।’
বুধবার নথি উধাও হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন নুর আলী। বলেন, ‘আমরা ওই কক্ষের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা কেউ স্বীকার করেনি।’
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করতে চায় মন্ত্রণালয়। নুর আলী বলেন, ‘সবাই সন্দেহের মধ্যে আছেন। আমরা পুলিশ ও সিআইডিকেও এভাবে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করছি, সত্য উদঘাটিত হবে।’
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিদর্শনের সময় উপসচিব (প্রশাসন) মো. সারোয়ার মোর্শেদ, উপসচিব (ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২) নাদিয়া হায়দার এবং সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদারকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত চলমান।’
ওই কক্ষে দায়িত্ব পালন করা মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগেও এই কক্ষ থেকে নথি হারানোর ঘটনা ঘটেছিল। বুধবার পর্যন্ত নথিগুলো এখানেই ছিল। পরে অফিসে এসে ক্যাবিনেটে সেগুলো পাওয়া যায়নি।’
১৭টি নথি ছিল ক্রয়সংক্রান্ত। নথিগুলো ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্রয় কার্যক্রম, নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়সংক্রান্ত।