স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নথি হারানোর ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগে রোববার সকালে হাজির হয় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি দল।
দলটির নেতৃত্ব রয়েছেন সিআইডির পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান। সঙ্গে আছে শাহবাগ থানা পুলিশের একটি দল।
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ২৯ নম্বর কক্ষ থেকে ১৭টি নথি হারানোর কথা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার জানান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষে (ভবন নং-৩, কক্ষ নং-২৯) ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২ এর সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদার এবং সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকার হেফাজতে থাকা ১৭টি ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না।
জিডি সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সংশ্লিষ্টরা অফিস করে নথিগুলো ফাইল ক্যাবিনেটে রাখেন। পরবর্তী সময়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে কাজ করতে গিয়ে দেখেন ফাইলগুলো ক্যাবিনেটে নেই।
উপসচিব নাদিয়া হায়দার শাহবাগ থানায় জিডিটি করেন। বৃহস্পতিবার জিডি হওয়ার পরই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিআইডির দক্ষিণ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ক্রাইম সিন ইউনিটসহ একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। বিকেল ৫টা ২০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সিআইডির টিম ঘটনাস্থলে অবস্থান করে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিদর্শনের সময় উপসচিব (প্রশাসন) মো. সারোয়ার মোর্শেদ, উপসচিব (ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২) নাদিয়া হায়দার এবং সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদারকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত চলমান।’
ওই কক্ষে দায়িত্ব পালন করা মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগেও এই কক্ষ থেকে নথি হারানোর ঘটনা ঘটেছিল। বুধবার পর্যন্ত নথিগুলো এখানেই ছিল। পরে অফিসে এসে কেবিনেটে সেগুলো পাওয়া যায়নি।’
১৭টি নথি ছিল ক্রয় সংক্রান্ত। নথিগুলো ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্রয় কার্যক্রম, নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়সংক্রান্ত।
তদন্ত কমিটি গঠন
নথি উধাওয়ের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদাৎ হোসাইন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) শাহ্ আলমকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। অপর দুজন হলেন যুগ্ম সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) আহসান কবীর ও উপসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা-১) মোহাম্মদ আবদুল কাদের।
নথি উধাও হয়েছে আগেও
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নথি উধাওয়ের আরও ঘটনা আছে। এক মাস আগে নথি হারানোর এক ঘটনা এখন তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অতিরিক্ত সচিব নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘এক মাস আগে আরও কিছু নথি উধাও হয়েছিল। সে বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। এই নথির দায়িত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন নারী কর্মকর্তা। নথি হারানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে তাকে শোকজ করা হয়েছিল।
‘তিনি কিছুদিন পর শোকজের জবাব দিয়েছিলেন। তবে তার জবাবে সন্তুষ্ট নয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেয়নি।’
এক মাস হলেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘অভিযুক্ত নারী কর্মকর্তা সন্তানসম্ভবা। এখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সন্তানের ওপর ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে। মানবিক কারণে বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন অবস্থায় রয়ে গেছে।’