বাংলাদেশের আইনজীবীদের জন্য শীতকালে এবং গরমকালে পৃথক ড্রেসকোড চেয়ে আবেদন করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে রোববার মৌখিকভাবে এ আবেদন জানান তিনি।
সাদা পোশাক পরে দীর্ঘ দিন প্র্যাকটিসের পর রোববার থেকে কালো কোট ও গাউন পরে শুনানিতে অংশ নিতে নির্দেশনা জারি করে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এদিন থেকে কালো কোটে অংশ নেন আইনজীবীরা।
সকালে আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘বাংলাদেশর আবহাওয়া এবং সবকিছু মিলিয়ে আইনজীবীদের জন্য একটি গ্রীষ্মকালীন এবং একটি শীতকালীন ড্রেস নির্ধারণ করার উদ্যোগ যদি আপনারা নিতেন। এটি বিবেচনার জন্য আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা কালো কোট পরি, বিদেশেও কিন্তু কালো কোট নাই। লন্ডনে পরে ডার্ক (ধূসর), কালো নয়। অনেক জায়গায় দেখেছি ব্লু পরতে। আমি সেখানে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছি তারা বলেছে কালো নয়, তাদেরটা ধূসর। আর আমরা মানুষ কালো, পড়ি কালো কোট, দেখা যায় আরও কালো।’
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমরা যারা সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিস করি এয়ার কন্ডিশন থাকায় আমাদের হয়তো তেমন সমস্যা হয় না, কিন্তু সারা দেশের আদালতগুলাতে যারা প্র্যাকটিস করেন তাদের অনেক কষ্ট হয়। এই ড্রেসটা শীতের জন্য ঠিক আছে। আমরা সাদা শার্ট পরে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এটা আসলে অতটা খারাপ লাগে না। বরং এই ড্রেসটা থাকলে বিভিন্ন আদালতে টাউট বাটপার শনাক্ত করতে সুবিধা হয়।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা শুধু আমার একার না। রুলস সংশোধনী করতে হবে।’
তখন আইনজীবী বলেন, ‘আপনি একটা সার্কুলার দিয়ে এটা সংশোধনী করতে পারেন।’
এসময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘শীতকালে এক ড্রেস এবং গরমে আরেক ড্রেস এটা কোনো দেশে আছে কিনা?’
তখন আইনজীবী বলেন, ‘আছে, মাই লর্ড আছে, অনেক দেশেই আছে। কোথায় কোথায় আছে আমি তার তালিকা দেব।’
পরে আদালত বলে, ‘আপনি এ বিষয়ে একটা আবেদন দেন।’
পরে আদালত তালিকায় থাকা মামলার শুনানি শুরু করতে বলেন।
করোনার কারণে দীর্ঘ দিন সাদা পোশাক পরে শুনানির পর ফের কালো কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধকতা চালু করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।
এ বিষয়ে গত ২৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি এবং আইনজীবীগণ শারীরিক উপস্থিতিতে এবং ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মামলা শুনানিকালে ক্ষেত্র মতো টার্নড-আপ সাদা কলার ও সাদা ব্যান্ডসহ সাদা শার্ট ও প্যান্ট/শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ ও কালো কোট/শেরোয়ানি এবং গাউন পরিধান করবেন। এ নির্দেশ আগামী ৩১ অক্টোবর রোববার থেকে কার্যকর হবে।’
অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বিচারিক আদালতের জন্যও একই নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরু হলে গত বছরের ৬ আগস্ট ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্তে শারীরিক উপস্থিতিতে এবং ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মামলা শুনানিকালে বিচারক ও আইনজীবীদের রীতিসিদ্ধ পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছিল।
ওই বছরের ১২ আগস্ট থেকে কালো কোট ও গাউন ছাড়া মামলার শুনানিতে অংশ নেন বিচারক ও আইনজীবীরা।
এরপর করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে গত বছরের নভেম্বর মাসে ফের কালো কোট চালু হয়। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে চলতি বছরের মার্চ থেকে আবার কালো কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধ্যকতা প্রত্যাহার করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।