শিগগিরই পরিষ্কার হচ্ছে না ইভ্যালির ভবিষ্যৎ পরণতি। শিগগিরই এটি চালু হবে, নাকি এটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে, তা স্পষ্ট নয় সরকার কিংবা আদালত গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড কারো কাছেই।
গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারাগারে থাকায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ইভ্যালির ব্যবসা কার্যক্রম।
ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই চান আবার কার্যক্রম শুরু করুক ইভ্যালি আর এর মাধ্যমে তাদের পাওনা পরিশোধের পথ খুলুক। আবার অতিমাত্রায় সংক্ষুব্ধদের কেউ কেউ চান, এর স্থায়ী অবসায়ন বা বিলুপ্তি।
আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন ইভ্যালির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অনেকটাই এড়িয়ে চলছে।
এটির ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে আদালতের আদেশে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড সদস্যদের মধ্যেও রয়েছে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান।
এ পরিস্থিতিতে ইভ্যালির ভবিষ্যৎ কী জানতে চেষ্টা করে নিউজবাংলা। দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সব মহলে যোগাযোগ করা হলেও এর কোনো সদুত্তর আসেনি কোনো পক্ষ থেকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদ্যোগঠিত ইভ্যালি বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইভ্যালির ব্যাবসায়িক কার্যক্রম চালানোর জন্য তো আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়নি। আদালতের রায়ে ক্লিয়ার বলা হয়েছে, রিপোর্ট আসার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা এখন দায়দেনা নিরূপণ করছি। এর ব্যাবসায়িক কার্যক্রম চলবে নাকি এটা বন্ধ করে দেব বা অবসায়ন করা হবে- এটি পরের সিদ্ধান্ত। অনেক পরের সিদ্ধান্ত।’
তাহলে রিপোর্ট আসতে কত সময় লাগবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সময় লাগবে। বেশ সময় লাগবে। প্রতিটি বিষয় দেখতে হবে। এত কাস্টমার, এত মার্চেন্ট, সবার হিসাব-নিকাশ। সেটা অডিট কোম্পানির ব্যাপার। কতটা দেরি হবে, সেটি তাদের অডিট কার্যক্রম কত সময়ে গুছিয়ে আনতে পারে, তার ওপর নির্ভর করছে।’
ইভ্যালির অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের প্রধান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জানান, গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়া ও ইভ্যালিকে বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়েই তারা কাজ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, এই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে বাঁচানো যায়। তবে এর জন্য অনেক সময় লাগবে।’
এদিকে দেশে ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে দায়িত্ব পালনের সময় ইভ্যালিতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান দিতে পারেননি তারা। এখন আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলে মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়টি এক রকম এড়িয়েই যাচ্ছে। তারা এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে আদালতের ওপর।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইভ্যালির বিষয়ে আমরা বলেছিলাম, আমরা দেখব গ্রাহকদের টাকা কিভাবে ফেরত দেয়া যায়। কিন্তু বিষয়টি এখন আমাদের হাতে নেই। আদালত এ বিষয়ে একটি বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। ওই বোর্ডই ইভ্যালির বিষয়ে কাজ করছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইভ্যালির বিষয়ে আদালত কর্তৃক যে দিকনির্দেশনা এসেছে, এখন এটি একটি গাইডলাইন। এখন ইভ্যালির পরিণতি যা হবে, আরও যদি একই রকম ঘটনা হয়, তাহলে অভিযুক্ত অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সেটা একটা মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।’
ইভ্যালির তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহক ও মার্চেন্টরা কোম্পানিটি থেকে পায় ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে তাদের (ইভ্যালি) মোট সম্পদের মূল্য মাত্র ১২১ কোটি টাকা।
ব্যবসা পরিচালনার সময় কোম্পানিটি বড় ডিসকাউন্ট দিয়ে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে। ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার কথা বলে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে আগাম পেমেন্ট গ্রহণ করে। তবে বেশির ভাগ গ্রাহক নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনও পণ্য বুঝে পাননি।
আবার কিছু ক্ষেত্রে ইভ্যালি পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রাহকদের রিফান্ড চেক অফার করে। সেখানেও হয় আরেক ধরনের প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ইভ্যালির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় ওই চেক বাউন্স করে।
অর্থ আত্মসাতের মামলায় ইভ্যালির সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা এখন জেলে। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থ আত্মসাৎ ও চেক জালিয়াতির অভিযোগে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী এবং ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এখন তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার কার্যক্রম চলমান। এতে বন্ধ হয়ে যায় ইভ্যালির ব্যাবসায়িক কার্যক্রম।
ওদিকে ইভ্যালির ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ গ্রাহক ফরহাদ হোসেন প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ন চেয়ে গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেন। সেই সঙ্গে ইভ্যালির নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আবেদনও করেন তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
পরে ইভ্যালি পরিচালনার জন্য গত ১৮ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ চার সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করে দেয়।