জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীকে বাঁচানোর রূপরেখা নিয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রোববার সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে ১৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা ছাড়েন সরকারপ্রধান।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে এটি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বিদেশ সফর। এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন তিনি। আর ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর যুক্তরাজ্যে এটাই হবে তার প্রথম সফর।
সফরকালে সোম ও মঙ্গলবার কপ-২৬-এর ওয়ার্ল্ড লিডার্স সামিটে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
শীর্ষ সম্মেলনসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। ১ নভেম্বর কপ-২৬-এর শীর্ষ বৈঠকে ভাষণ দেবেন তিনি। একই দিন সিভিএফ কমনওয়েলথের একটি যৌথ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবেও অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
১ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি দ্য ক্রিটিকাল ডিকেইড শীর্ষক একটি সভায় অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। ২ নভেম্বর ওম্যান অ্যান্ড ক্লাইমেট শীর্ষক সভায় অংশ নেবেন তিনি।
গ্লাসগোতে অবস্থানকালে স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্যদের উদ্দেশে ‘আ কল ফর ক্লাইমেট প্রোসপারিটি’ শীর্ষক বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, প্রিন্স অফ ওয়েলস ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টসহ আরও কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তার।
বুধবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ছেড়ে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
এ সময় তিনি শহরের ওয়েস্ট মিনস্টার প্যালেসে দেশটির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনে অংশ নিতে ৯ নভেম্বর লন্ডন থেকে প্যারিসের উদ্দেশে রওনা হবেন সরকারপ্রধান।
ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। বেশ কিছু ফরাসি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ এমইডিএইএফএর প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সময় বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অফ ইনটেন্ট সই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১২ নভেম্বর ইউনেসকোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনে উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বজনীন আদর্শ তুলে ধরার পাশাপাশি জাতিসংঘের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্যারিসের এনগেজমেন্টটা খুব এক্সটেনসিভ। সেখানে তিনটি স্থানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। ফ্রান্সের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, আমরাও সেখানে রপ্তানি করতে চাই। এয়ারবাসের সঙ্গে সেখানে বৈঠক আছে, এভিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স। ইউরোপে পরিবর্তনের ফলে নতুন করে ইইউ গঠিত হওয়ার পরে এটিই প্রথম সফর।’
সফরকালে বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষিত ইউনেসকো পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দিতে পারেন বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
১৩ নভেম্বর প্যারিস হতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। ১৪ নভেম্বর সকাল ১০টায় তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সেদিন বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনেও অংশ নেবেন তিনি।
ইউরোপের বিনিয়োগে চোখ
প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা করছে ঢাকা। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব দেশের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক মজবুত করছি। আপনারা খেয়াল করবেন, আমরা যখন মুজিব চিরন্তন করলাম। প্রতিটি দেশই বাংলাদেশের লিডারশিপের ওপর আস্থা দেখিয়েছে। এ জন্য দেখিয়েছে যে আমাদের গত ১২ বছরের অর্জন অভাবনীয়।
‘এ অবস্থায় আমরা সম্পর্কগুলো আরও মজবুত করতে চাই। একটি বড় লক্ষ্য আমাদের, আমরা দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চাই। আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য সব আছে। আমরা এটাতে খুব জোর দিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের আহ্বান করছেন বিনিয়োগের জন্য। আগেও আমরা যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলাম, যথেষ্ট আকর্ষণ দেখা গিয়েছিল। তাদের অনেক কোম্পানি সারা বিশ্বে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশও তাদের বিনিয়োগের জায়গা হতে পারে। ফ্রান্সে সরাসরি ফ্লাইট নাই। আমরা এটা নিয়েও আলাপ করব। আশা করছি, আমরা এটা পেয়ে যাব।
‘এই যে তিনি স্কটল্যান্ডে কমিউনিটির সঙ্গে আলাপ করবেন, সেখানেও ব্যবসার কথা উঠবে। লন্ডনে বিপুল ব্যবসায়ী অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের অনেক ব্যবসায়ী সেখানে যাচ্ছেন।’
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে যে বৈঠক করবেন তাতে পুরোনো সম্পর্ক ঝালাইয়ে জোর থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অনেক ভালো সম্পর্ক। বহু দ্বিপক্ষীয় ও মাল্টিলেটারেল আলোচনা অনগোয়িং।
‘আমাদের একটি বড় বিষয় হচ্ছে, আমরা স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে মুভ করেছি। এতে বিভিন্ন সুবিধা যেটা আমরা পাই, এটা যদি ধরে রাখতে চাই…এরই মধ্যে ইউএনের সঙ্গে আলাপ করে ২০২৯ সাল পর্যন্ত আমরা এটা নির্ধারিত করেছি। আমরা আরও চাই। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলাপ করব।’
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক রয়েছে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়েও কথা বলছি সাম্প্রতিককালে। আগে যেগুলো আলোচনা হয়েছিল, সেগুলো আবার ঝালাই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হলে এটি হবে হাইট অফ দ্য ডায়ালগ।’