মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে আমানত শাহ ফেরিডুবির পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের প্রবেশদ্বার খ্যাত নৌপথটির দৌলতদিয়া প্রান্তে গত বুধবার থেকে তীব্র যানজট।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় গাড়ির সব চাপ পড়েছে দৌলতদিয়া ঘাটে। যানবাহনের কয়েক কিলোমিটার সারি তৈরি হয়েছে ঘাট এলাকায়। চালক ও যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ট্রাকচালকরা। যাত্রীবাহী গাড়িগুলো আগে পার করে দেয়া হলেও ট্রাকগুলো আটকে থাকছে দিনের পর দিন।
মহাসড়কে যানের চাপ কমাতে এর মধ্যে অপচনশীল পণ্যের ট্রাকগুলোকে রাখা হয়েছে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে। এই স্থানে নেই কোনো গণশৌচাগার ও রেস্তোরাঁ।
ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি রেখেও কোথাও যেতে পারছেন না চালক ও সহকারীরা। এতে তাদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকের মধ্যেই রান্না করছেন অনেকে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
যশোর থেকে বৃহস্পতিবার রাত ২টায় এই ঘাটে আসা ট্রাকচালক শরাফত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কি মানুষ? আমাদের সংসার, বউ-পোলাপান নেই? দিনের পর দিন ট্রাকেই থাকতে হয়। দুই দিন ধরে এখানে ট্রাক নিয়ে আটকে আছি। কবে, কখন পার হব, কিছুই বুজছি না।’
বেনাপোল থেকে আসা ট্রাকচালক করিম বলেন, ‘দিনের পর দিন আমাদের রাস্তায় থাকতে হয়। ট্রাকই এখন আমাদের সংসার। ট্রাকেই রান্না, ট্রাকেই ঘুমাতে হয়।
‘এখানে এসে বসে আছি প্রায় দুই দিন হলো। এখনও দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যেতে পারলাম না। কবে, কখন পার হব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সরেজমিনে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দেখা যায়, কল্যাণপুর বাজারসংলগ্ন একটি ট্রাকের ক্যাবিনে কেরোসিনের স্টোভে রান্না করছেন চালকের সহকারী। চালকের সিটের ওপরই তিনি রেখেছেন স্টোভ।
ডিজেল ইঞ্জিনচালিত যানের ভেতরে রান্না করায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জানালে তিনি বলেন, ‘খাবার পাব কোথায়? যেখানে আমাদের গাড়ি থামানো হয়েছে, এখানে কোনো হোটেল নেই, টয়লেট নেই।
‘ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি রেখে যাওয়াও ঝুঁকি। দুই দিন ধরে পচে মরছি এখানে। আমাদের দেখার কেউই নেই।’
সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মিজান রহমান অবশ্য দাবি করেন, তারা ট্রাকের ভেতরে রান্না করতে নিষেধ করছেন। কেউ রান্না করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বিড়ম্বনা এড়াতে অন্য রাস্তা ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দেখা যায়, নদীতে স্রোত থাকায় ফেরি আসতে বেশ সময় লাগছে। ১৬টি ফেরি চলাচলের কথা বলা হলেও ঘাটে তার চেয়ে সংখ্যায় কম ফেরি চলাচল করতে দেখা যায়।
ঘাটে থাকা বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা কিছু বলতে পারবেন না।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া শাখার ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন পরে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবা দিতে। দুটি ফেরি মেরামতের কাজ চলছে। এখন এই নৌরুটে ১৫টি ফেরি চলছে।’
পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি দুর্ঘটনার পর পারাপারে ভোগান্তি হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।