দুই যুগে বাংলাদেশের সম্পদ সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ৩ হাজার ১০৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯০৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সাল শেষে তা হয়েছে ৩ হাজার ১০৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এরই মধ্যে আরও তিনটি বছর শেষ হতে চলেছে; এই তিন বছরে বাংলাদেশের সম্পদ কতটা বেড়েছে, তার কোনো তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি বিশ্বব্যাংক।
১৯৯৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৪৬টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে ‘দ্য চেইঞ্জিং ওয়েলথ অব নেশনস ২০২১’ শিরোনামে বিশ্বসম্পদের পরিবর্তন নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
প্রাকৃতিক পুঁজি, মানব-পুঁজি ও উৎপন্ন পুঁজি– এই তিন ধরনকে পরিমাপের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের হিসাব করা হয়েছে।
মূলত মানব-পুঁজির অবদানের ওপর ভর করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের সম্পদ মোট ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে বিশ্বের সম্পদ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মূলত এশিয়ায় দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণে মধ্যম আয়ের দেশগুলো উচ্চ আয়ের দেশগুলোর প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্পদও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশে মানব-পুঁজি ৬৬৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২ হাজার ৮৭ বিলিয়ন ডলার, উৎপন্ন পুঁজি ১৫৩ বিলিয়ন থেকে ৮৬২ বিলিয়ন ডলার এবং প্রাকৃতিক পুঁজি ১১৫ বিলিয়ন থেকে ১৯৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশের মোট সম্পদের বৃহত্তম অংশ দখল করে আছে মানব-পুঁজি। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে লিঙ্গবৈষম্যের খুব একটা উন্নতি হয়নি।
১৯৯৫ সালে মোট মানব-পুঁজির ৯২ শতাংশ পুরুষদের অবদান ছিল; আর নারীদের অবদান ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। ২০১৮ সাল শেষে দেখা যায় প্রায় সেই একই চিত্র। মোট মানব-পুঁজির ৯৩ শতাংশ পুরুষদের অবদান; বাকিটা নারীদের।
উল্টো এই দুই যুগে বাংলাদেশের মোট সম্পদে মানব-পুঁজির অংশ বেশ খানিকটা কমেছে। ১৯৯৫ সালের মোট সম্পদে মানব-পুঁজির অংশ ছিল ৭৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের তা ৬৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে নির্মাণ ও অবকাঠামোর মতো উৎপাদিত মূলধনের অবদান বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮ সাল শেষে এর অংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯৫ সালে ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
মানব-পুঁজির গুরুত্ব স্বীকার করে স্বল্পমেয়াদি মুনাফা থেকে নজর সরিয়ে দক্ষতা ও সুস্থ জনসংখ্যা সৃষ্টিতে বিনিয়োগে জোর দেয়ার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের পর বৈশ্বিকভাবে ম্যানগ্রোভের বিস্তৃতি কিছুটা কমলেও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও সম্পদের প্রবৃদ্ধির মধ্যে উপকূলীয় বন্যার ঝুঁকি ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় উপকূল প্রতিরক্ষায় ম্যানগ্রোভের সার্বিক মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ২৩ বছরে বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সম্পদমূল্য ৪০২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ১৯৯৫ সালে ছিল ২০৪ কোটি ডলার।
ম্যানগ্রোভের বিস্তৃতি, বন্যার ঝুঁকি, বন্যা থেকে ধ্বংসের ঝুঁকিতে থাকা উৎপন্ন পুঁজির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ম্যানগ্রোভের মূল্য ও এর পরিবর্তন পরিমাপ করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে সরাসরি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬৬ শতাংশ বেড়েছে, পুঁজিপাট্টা ধ্বংসের হার বেড়েছে ২৬৮ শতাংশ। ম্যানগ্রোভ ছাড়া বেড়ে যাওয়া বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ আরও ব্যাপক হতে পারত।
বিশ্বব্যাংক বলছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সম্পদের খুব বড় একটি অংশ নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক পুঁজি। টেকসই উন্নয়ন করতে হলে স্বল্পমেয়াদি আয় বাড়ানোর চিন্তা থেকে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস না করে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নতর ব্যবস্থাপনা, পরিমাপ ও মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে মানুষকে ভালো রাখার জন্য পরিবেশের সক্ষমতা বাড়ানো যায়।
বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভিয়েতনাম, জাপান, তাইওয়ান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় ম্যানগ্রোভের আয়তন বাড়ার পাশাপাশি প্রতি কিলোমিটার সংরক্ষিত সম্পদের মূল্যও বেড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সম্পদ
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ২৩ বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় মোট সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু একই সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মাথাপিছু সম্পদ বিশ্বের সর্বনিম্নের মধ্যে রয়েছে।
মানব-পুঁজি এই অঞ্চলের সম্পদের অর্ধেকেরও বেশি, কিন্তু অত্যন্ত ভারসাম্যহীন, যার ৮০ শতাংশের বেশি পুরুষদের বলে দাবি করা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে এটির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
১৯৯৫ সাল থেকে বৈশ্বিক সম্পদের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার সঙ্গে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে রয়ে গেছে।
২০১৮ সাল শেষে ভারতের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬০১ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের ৩ হাজার ৪৭৬ বিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কার ৬৫০ বিলিয়ন ডলার, নেপালের ৪২৯ বিলিয়ন ডলার আর মালদ্বীপের ২৬ বিলিয়ন ডলার।
মাথাপিছু সম্পদের দিক দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও নেপালের চেয়ে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৬৫ ডলার। পাকিস্তানের ১৬ হাজার ৩৮০ ডলার; নেপালের ১৫ হাজার ২৮০ ডলার।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু সম্পদের দিক দিয়ে মালদ্বীপ সবার ওপরে; দেশটির মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ৫০ হাজার ৭৯৫ ডলার। তারপর ভারত ২৪ হাজার ১০২ ডলার।