নারীদের ক্যান্সারে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ স্তন ক্যান্সার। এই ক্যান্সারের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার পর রোগটি শনাক্ত হয়। অসচেতনতার কারণেই রোগী অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে অক্টোবর মাসটি স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসাবে পালন করা হয়। তাই এই মাসকে সামনে রেখে দিনব্যাপী ওয়েলনেস কার্নিভালের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্যান্সার এইড ট্রাস্ট (ব্যানক্যাট) ও পরিবর্তন করি ফাউন্ডেশন।
রোববার গুলশানের ইউনাইটেড সিটিতে সকাল ৯টায় শুরু হয়ে এই ওয়েলনেস কার্নিভাল চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এ উপলক্ষ্যে ইউনাইটেড সিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গোলাপী আলোয় আলোকিত করা হয়। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে গোলাপী রঙটি স্তন ক্যান্সার সচেতনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ওয়েলনেস কার্নিভালে স্তন ক্যান্সার বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে। দিনব্যাপী এই আয়োজন শুরু হয় ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে। ১৬টি দল অংশ নেয় এতে। পরে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
বিকেল তিনটায় অনুষ্ঠিত হয় ক্যান্সার সিনটম প্রিভেনশন অ্যান্ড ট্রমা ম্যানেজম্যান্ট শীর্ষক এক প্যানেল ডিসকাশন। এখানে অংশ নেন ভারতের দুই স্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাঘুবেন্দ্র বাবু ও ওবুভাম্মা সিইড।
কার্নিভালে অংশ নেয়া অতিথিদের মত বিনিময়
তাদের মতে, স্তন ক্যান্সারের ভয়াবহতার একটি বড় কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের অসচেতনতা। বছরে কমপক্ষে একবার স্তন ক্যান্সারের মেডিকেল চেক-আপ করালেই নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকাংশে। সাধারণ মানুষকে এই আচরণে উৎসাহিত করার তাগিদ দেন তারা।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সামাজিক সংগঠন ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আনুশা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সমাজে অভিভাবকেরা সন্তানদের মানসিক রোগ বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসুখ বলে মানতে রাজি নন, বরং বেয়াড়াপনা বা উচ্ছন্নে যাওয়া বলেই মনে করেন। অনেকেই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীকে পাগল বলেন। এমনটা উচিত নয়।’
তিনি বলেন, ‘আসলে একটা সময় ছেলে মেয়ের মধ্যে হরমোন পরিবর্তন দেখা দেয়। সে কারণে তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। এমন হলে তারা দ্রুত আনন্দ পায়, কষ্ট পায়, দ্রুত রেগে যায় বা ভয় পায়। এসব আবেগ অনেক বেশি থাকার কারণে সবকিছু তাদের উপর বেশি প্রভাব ফেলে। এ সময় অভিভাবককে সচেতন হতে হবে।’
তিনি জানান, ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’ মূলত এ ধরনের সচেতনতা বাড়াতেই কাজ করে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজের মানুষকে সচেতন করে।
যাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল কার্নিভাল
পরিবর্তন করি ফাউন্ডেশন-এর সভাপতি আহসান হাবীব ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশ ক্যান্সার এইড ট্রাস্ট (ব্যানক্যাট) ও পরিবর্তন করি ফাউন্ডেশন-এর যৌথ উদ্যোগে স্তন ক্যান্সার রুখতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করা হয়। এমনকি গরীব ও অসহায় নারীদের স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক চেক-আপ ও পরামর্শ সম্পূর্ণ বিনা খরচে দেয়া হয়।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতের ৫০ শয্যার একটি পুনর্বাসন ইউনিটও করা হবে বলে জানান তিনি।