ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের শনিবার বিকেল ৫টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সোহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাত্র ৩০ মিনিট আগে অফিশিয়ালি জানতে পারছি হল বন্ধ। পরীক্ষাও পেছানো হইছে। ওরা ওরা ঝামেলা করছে, শাস্তিও তাদের হোক, আমাদের কেন ভোগান্তি হবে?
‘পঞ্চগড়ে আমার বাড়ি। এই সন্ধ্যায় কী করব? আমরা এখন কই যাব?’
আবরার আল ফয়সাল নামের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সাড়ে ৪টার দিকে নোটিশ পেয়েছি আমরা। আধা ঘণ্টার নোটিশে তো হল ছাড়া সম্ভব না। তবু শহরে আত্মীয় থাকায় আমার খুব বেশি সমস্যা হবে না হয়তো কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকের বাড়ি দূরের জেলায়। তারা কী করবে? কোথায় যাবে হঠাৎ? যাদের মধ্যে ঝামেলা, কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ে বসলেই তো হয়।’
চমেকে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে তো টিকিট পাওয়া যাবে না। আধা ঘণ্টা আগে নোটিশ দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে বের হয়ে যেতে বলছে। এভাবে হয় নাকি? এটা সম্ভব? আমরা কি রাস্তায় থাকব?
‘যেহেতু বাড়ির বাস পাওয়া যাবে না, তাই ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর যদি ঢাকার বাসও না পাই, কোথায় যাব জানি না।’
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, ‘আমরা আসলে রাতের ঘটনার সমাধান করতে চেয়েছিলাম। তাই সকালে দুই পক্ষের সঙ্গে বসি কিন্তু এরপর আবার ঝামেলা হয়েছে। একটা ছেলে সিরিয়াসলি ইঞ্জুরড। তো আর কী করার?
‘বাধ্য হয়ে অ্যাকাডেমিক মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে এটা ছাড়া আর কোনো অপশন নেই আমাদের হাতে।’
অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘এখনও আমাদের শিক্ষার্থীরা সবাই হলে ওঠেনি। এখন হলে উঠেছে প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কিছু পরীক্ষার্থী। তা ছাড়া যারা নতুন পাস করেছে তাদের মধ্যে ৬০ জনের মতো আছে।
‘ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্ররা আজকের মধ্যে বের হয়ে যাচ্ছে। কেউ ফ্রেন্ডের বাসায়, কেউ আত্মীয়র বাসায় অথবা শহরে যাদের বাসা আছে তারা বাসায় চলে যাচ্ছে। আর ছাত্রীদের মধ্যে যাদের শহরে বাসা আছে তারা বাসায় চলে গেছে। এখনো যারা বাকি তারাও কালকের মধ্যে চলে যাবে।’
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে দুই পক্ষের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। এর জের ধরে শনিবার সকাল ৯টার দিকে দুই পক্ষের আবারও সংঘর্ষ হয়। এতে মাহফুজুল হক, নাইমুল ইসলাম ও আকিব হোসেন নামের তিনজন আহত হন।’
তাদের মধ্যে আকিব শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। আর মাহফুজ ও নাইমুল ইসলাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী নাছির গ্রুপের সদস্য হিসেবে পরিচিত।
সংঘর্ষের পর নওফেলের অনুসারী ও নাছির গ্রুপ এ ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করেছে।
নওফেলের অনুসারী মো. খোরশেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমাদের এক ছোট ভাইকে নাছির গ্রুপের ওরা ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছে। রাতে আমরা এর কারণ জিজ্ঞেস করতে গেলে আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় আমাদের দুজন আহত হয়।
‘পরে সকালে বিষয়টি সমাধান করার জন্য প্রিন্সিপাল ম্যাম আমাদের ডাকেন। আমরা কথা বলছিলাম, আমাদের জুনিয়ররা হল থেকে আসতেছিল। এ সময় নাছির গ্রুপের ওরা জুনিয়রদের ওপর হামলা করে একজনকে আহত করে।’
নাছির গ্রুপের অনুসারী মো. শিমুল বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। বরং আমাদের দুজন কর্মীকে ওরা হামলা করে আহত করেছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে সরাসরি বসতে হবে।’
এরপর শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাঁচলাইশ থানায় সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে নওফেলের অনুসারীরা।
ওসি জাহিদুল কবির জানান, লিখিত অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। পরে মামলা হিসেবে নেয়া হবে।
সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।