প্রণোদনার প্যাকেজের ঋণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ।
শনিবার সিলেটে এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঋণ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে বড়রা বেশি সুবিধা পাচ্ছে বলে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট মহলে কথা উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব উদ্যোক্তা যাতে ঋণ সুবিধা পেতে পারেন, সেজন্য আলাদা একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট কার্যালয়ের সহায়তায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এসএমই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ব্যাংকারদের দূরত্ব রয়েছে। এটি কমাতে হবে। এজন্য সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘ছোট উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ঋণ ফেরত না পাওয়ার নজির নেই। এজন্য ঋণ বিতরণে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে নিয়মকানুন সহজ করার জন্য ব্যাংকারদের প্রতি অনুরোধও জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখার পরামর্শও দেন।
চলতি অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ শেষ করা সম্ভব হবে বলেও আশা জানান ড. মো. মফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় চলতি অর্থবছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে এরই মধ্যে ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এই ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশ ।
প্রণোদনা প্যাকেজর আওতায় একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। জামানতবিহীন ঋণ পাবেন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। উদ্যোক্তারা ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।
চুক্তি করা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ব্র্যাংক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেসিক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঋণ ছাড় করা হয়েছে। আরও ৫৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
তিনি জানান, মোট ঋণের ৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এর আলোকে ঋণ বিতরণ করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, যারা এখনও ব্যাংক ঋণ পাননি তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তা ও করোনা মহামারির কারণে গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় আনা হবে।