বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে চলত নারী পাচার

  •    
  • ৩০ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:৫৯

ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে একটি চক্র প্রথমে নাচ শেখানোর নামে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সুন্দর তরুণীদের ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করিয়ে তাদেরকে বেপোয়ারা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে ফেলা হয়।

বিদেশে পাচার হতে যাওয়া ২৩ নারীকে উদ্ধারের পাশাপাশি দুটি পাচার চক্রের মূল হোতা সহ ১১ জনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শুক্রবার রাতে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা ও তেজগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে প্রথমে ২২ নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গার জীবনগর থেকে পাচার হওয়ার আগমূহুর্তে আরও এক নারীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৪।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও চুয়াডাঙ্গা থেকে ভারতে নারী পাচার চক্রের হোতা কামরুল ইসলাম ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুল সহ তার চক্রের রিপন মোল্লা, আসাদুজ্জামান সেলিম, নাইমুর রহমান ওরফে শামীমকে আটক করা হয়েছে।

একই সময়ে বনানী, পল্লবী, তেজগাঁও ও উত্তরায় অভিযান চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচার চক্রের হোতা নুর-নবী ভুঁইয়া রানা সহ তার চক্রের আবুল বাশার, আল ইমরান, মনিরুজ্জামান, শহিদ সিকদার, প্রমোদ চন্দ্র দাস ও টোকনকে আটক করা হয়েছে।

আটকের সময় দুই চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে ৫৩টি পাসপোর্ট, ২০টি মোবাইল, ৮ বোতল বিদেশি মদ, ২৩ ক্যান বিয়ার, দুটি মোটরসাইকেল, একটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার ও নগদ অর্থ সহ মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে র‌্যাব-৪ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, পাশ্ববর্তী দেশে মানব পাচারকারী চক্রের হোতা ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুলের নেতৃত্বাধীন চক্রের সদস্য প্রায় ১৫-২০ জন। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি সক্রিয়।

কামরুলের ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে প্রথমে চক্রটি নাচ শেখানোর নামে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সুন্দর তরুণীদের ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করিয়ে তাদেরকে বেপোয়ারা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে ফেলা হয়। এরপরই তাদেরকে পাশ্ববর্তী দেশে আরও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে দেয়া হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার নামে তরুণীদের গ্রুপ নিয়ে ভারতে যেতেন কামরুল। সেখানে নিয়ে এসব তরুণীকে কৌশলে বিক্রি করে দেয়া হতো। এভাবে চক্রটি গত ২-৩ বছরে প্রায় শতাধিক মেয়েকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে।’

তিনি জানান, মূলত অমানবিক এবং অনৈতিক কাজ করানোর জন্যই নারীদের পাচার করা হতো। পাচারের আগে নারীদেরকে প্রথমে সীমান্ত এলাকার সেফ হাউজে নিয়ে রাখা হয়। পরে সীমান্তের ওপারের সিন্ডিকেটের যোগসাজসে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে নারীদের পাচার করা হয়।

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক চক্রটি বিভিন্ন দেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচার করতো বলে উল্লেখ করেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘দেশে এই চক্রের ১০-১২ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। পাঁচ-সাত বছর ধরে হাউজকিপিং, নার্স, রেস্তোরাঁ পেশায় নারী কর্মীদের বিনা অর্থে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে আসছে তারা। উঠতি বয়সী তরুণী ও মধ্য বয়স্ক নারীরাই তাদের টার্গেট।’

আল মঈন জানান, মূলত বিদেশে পাচারের মাধ্যমে নারীদের বিক্রি করে দেয়া হতো। এ পর্যন্ত চক্রটি ৩০-৩৫ জন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। এ ছাড়া বৈধভাবে আরও অন্তত ২০০-২৫০ নারীকে বিদেশে নিয়ে নির্ধারিত কাজ না দিয়ে বিক্রি করেছে তারা। বিভিন্ন দেশে নারীদের আটকে রেখে স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও আদায় করে চক্রটি।

মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারকারী চক্রের হোতা নুর-নবী ভুঁইয়া রানার নেতৃত্বে ঢাকায় কয়েকটি সেইফ হাউজ পরিচালিত হয়। এসব সেইফ হাউজ থেকেই নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করা হয়।

এই চক্রের সদস্যরা প্রথমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় উঠতি তরুণী এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ও মধ্যবয়স্ক নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরে বিদেশে বিভিন্ন লোভনীয় চাকরীর প্রলোভন দেখান তারা। কেউ রাজি হলে প্রথমে ঢাকায় সেফ হাউজে রেখে ভুয়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় কোন নারী বিদেশে যেতে অনীহা প্রকাশ করে পাসপোর্ট ফেরত চাইলে তাদের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নুর-নবী ভুঁইয়া রানা ১৯৯৮ সাল থেকে দুবাই এবং ওমানে প্রবাসী হিসেবে কাজ করেন। ওমানে থাকা অবস্থায় মানব পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০২০ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে মানবপাচারের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর