‘আমার সংসার কেমনে চলবে আর পোলাপানের পড়ালেখা কেমনে চালামু? যে গাড়ির ইনকাম দিয়া এই সব করতাম, সেই গাড়ি দুইডা এখন নদীতে। আমার ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।’
বলছিলেন ফেরি দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া দুটি কাভার্ড ভ্যানের মালিক হারুন অর রশিদ। মাগুরার শালিখা থানার আরুয়াকান্তি এলাকার হারুন তার গাড়িগুলোর জন্য অপেক্ষা করছেন মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাবা মারা গেছে আমার পাঁচ বছর বয়সে। তখন থেইকা খায়া না-খায়া সংসারের হাল ধরছি। একটু বড় হয়েই গার্মেন্টসে কাজ করছি, তারপর বিদেশ গেছি। বিদেশ থেইকা আইসা জমানো টাকা আর ঋণ কইরা ছয় বছর আগে ৮০ লাখ টাকা দিয়া দুইডা কাভার্ড ভ্যান কিনলাম।
‘গাড়ি থেইকা মাসে মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা কামাইতাম। আমার মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে মিলা ছয়জনের সংসার। একমাত্র আয়ের রাস্তাটা বন্ধ হইয়া গেল। এখন তো ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।’
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে নোঙর করার সময় বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মোটরসাইকেল ও যাত্রী নিয়ে আংশিক ডুবে যায় আমানত শাহ নামের একটি রো রো ফেরি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক ও উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার কমান্ডার সানোয়ার হোসেন জানান, বুধবার প্রথম দিনের উদ্ধার অভিযানে একটি মোটরসাইকেল ও চারটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে ৫টি যানবাহন উদ্ধার করা হয় এবং শুক্রবার অর্থাৎ তৃতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে আরও ৩টি যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১৩টি যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে।
হারুন বলেন, ‘আজকা তিন দিন হলো এহনো আমার গাড়ি উঠাইতে পারল না। কবে যে পারব কেরা জানে! গাড়ি উদ্ধার করা হইলেও কমপক্ষে দেড় মাস সময় লাগব মেরামত করাইতে। মেরামতে লাগব ১০ লাখ টাকার মতো। এত টাকা কই পামু? ঘাট কর্তৃপক্ষ যদি আমাগো দিকে না তাকায় তাইলে কী করুম আল্লায় জানে।’