নির্বাচনে পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে প্রচারে নামেন অন্য সদস্যরা। তবে ভিন্নধর্মী একটি প্রচার দেখা গেছে পঞ্চগড়ে।
আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নে বাড়ির বড় বউকে জেতাতে স্বামীর সঙ্গে প্রচারে নেমেছেন অন্য দুই বউ।
স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের মেহেরপাড়া গ্রামের চাষি দেলোয়ার হোসেনের তিন স্ত্রী শাহিনা আক্তার, আকলিমা বেগম ও রত্না বেগম। তিন স্ত্রী ও চার সন্তানের সংসার হলেও দেলোয়ারের পরিবারে অশান্তি নেই। যেকোনো সমস্যা তারা নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করেন।
তিন স্ত্রীর মধ্যে প্রথম শাহিনা আক্তার এলাকাতেও বেশ জনপ্রিয়। এ জন্য আসন্ন রাধানগর ইউপি নির্বাচনে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তিনি।
তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে ভোট হবে। শাহিনা অবশ্য এখনও মনোনয়নপত্র নেননি। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রচারের নেমেছেন।
স্থানীয়রা জানান, সাধারণত একাধিক স্ত্রী থাকলে সংসারে নানা সংকট তৈরি হয়। তবে ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেলোয়ার হোসেন ও তার তিন স্ত্রী। শাহিনাকে জেতাতে তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন স্বামীর অন্য দুই স্ত্রী।
শাহিনার জন্য দোয়া চেয়ে দেলোয়ার তার তিন স্ত্রীকে নিয়েই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তিন স্ত্রীর হাসিখুশি প্রচার দৃষ্টি কেড়েছে তাদের।
দেলোয়ারের তৃতীয় স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, ‘আমরা স্বামীসহ তিন সতিন মিলে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একত্রিতভাবে এই প্রচার করতে দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন। আমাদের নিয়ে স্থানীয় ভোটার ইতিবাচক আলোচনা করছেন। আমাদের বড় আপা (শাহিনা) এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। আশা করি, মানুষের ভালোবাসায় ভোটে জিতবেন তিনি।’
দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী তিনটা বিয়ে করেছেন। সবাই আমরা একসঙ্গে বসবাস করি এবং সুখেই আছি। এবারের ইউপি নির্বাচনে আমরা আলোচনা করে বড় আপাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। তাই তাকে জয়যুক্ত করতে আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করছি।’
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রার্থী হতে চাওয়া শাহিনা বেগম বলেন, ‘আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আমার দুই বোন (দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রী) ও স্বামীর পরামর্শে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে ভোট করতে চাই। সুখে-দুঃখে আমরা তিন সতিন একে অপরের পাশে দাঁড়াই। এ জন্য তারাও সব সময় আমার পাশে থাকেন।
‘এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি এলাকায় বেশ পরিচিত। মানুষের সুখে-দুঃখে নিজেকে আরও নিবেদিত করতে চাই। তাই ভোটের জন্য সবার কাছে গিয়ে দোয়া চাচ্ছি। প্রচারে এলাকার মানুষের অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি, আমি জয়লাভ করব।’
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি খেটে খাওয়া মানুষ। এখন মাছ চাষ করে সংসার চালাই। ১৬ বছর আগে প্রথম বিয়ে করি। এরপর ১৩ বছর আগে দ্বিতীয় এবং প্রায় ৬ বছর আগে তৃতীয় বিয়ে করি। বর্তমানে তিন বউ ও চার সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে আছি।
‘আমি বিভিন্ন সময় এলাকার মানুষদের নানা সমস্যায় এগিয়ে গিয়েছি। জনসেবামূলক কাজে আমার স্ত্রীরাও আমাকে সমর্থন দেয়। আমার বড় স্ত্রী এলাকায় বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয়। তাই তাকে জনগণের সমর্থন নিয়ে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবে ভোটে দাঁড় করাতে চাই। যাতে গরিব, দুঃখী ও খেটে খাওয়া মানুষের সেবা করা যায়।’