সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশের সামনে আগামী চ্যালেঞ্জ হলো সোশ্যাল মিডিয়া। পুরাতন অপরাধ কমছে, কিন্তু প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধ বাড়ছে।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের শহীদ শিরু মিয়া মিলনায়তনে শনিবার কমিউনিটি পুলিশিং দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বলেন, ‘আত্মমর্যাদাশীল জাতি হতে হলে আমাদের আত্মমর্যাদাশীল সমাজ গঠন করতে হবে। সেই সমাজটা হতে হবে অপরাধমুক্ত এবং অপরাধের ভীতিমুক্ত। জিরো ক্রাইম কোনো সমাজে পাওয়া খুব কঠিন। ইউরোপের অনেক জেলখানা এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ সেখানে কোনো অপরাধী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একটি কমন জেলখানা রাখা হয়েছে, যাতে করে কেউ পাওয়া গেলে তাদের রাখা যায়।’
ভীতিমুক্ত পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাত তিনটার সময় অথবা ভোর পাঁচটার সময় একাকী একজন নারী মহাসড়ক, রাজপথসহ সব পথে হেঁটে যাবেন ভীতিমুক্ত পরিবেশে; একটি শিশু হেঁটে যাবে ভীতিমুক্ত পরিবেশে। যখন আমরা এইটা অর্জন করতে পারব, তখন আমরা একটি ভীতিমুক্ত ও অপরাধমুক্ত সমাজের কাছাকাছি এসে পৌঁছে যাব।
‘তবে পুলিশের পক্ষে এটি এককভাবে সম্ভব নয়। এই কাজটি রাষ্ট্রকে করতে হবে পার্টনারশিপের মাধ্যমে। পার্টনারশিপ করতে হবে সমাজের সঙ্গে, নাগরিকদের সঙ্গে। একেই বলা হয় পার্টনারশিপ ইন পুলিশিং।’
জনগণের সঙ্গে মেলবন্ধনের কথা উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে একাধিকবার জঙ্গিদের কবলে পড়েছি আমরা। প্রতিবারই জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক আমরা সমূলে উৎপাটন করতে পেরেছি। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, জনগণের সঙ্গে আমাদের মেলবন্ধন ছিল।
‘প্রতিবার হামলার সময় দেশের মানুষ যেভাবে পুলিশকে সহযোগিতা করেছে, সেই সহযোগিতা না পেলে আমরা সফল হতে পারতাম না। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়; তারা শান্তি ভালোবাসে। জনগণ কখনোই রক্তপাত পছন্দ করে না। এ কারণে জঙ্গিবাদ এ দেশে শেকড়-বাকড় গেঁড়ে বসতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় যখন অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখন বাংলাদেশ পুলিশ ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে এই সমাজের জন্য, এই দেশের জন্য কাজ করেছে। সন্তানের ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, মৃতকে দাফন ও সৎকারের কাজ করেছে।
‘আমরা দেশের জনগণ, সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা পেশাদারি, সেবামূলক, জনবান্ধব, নারীবান্ধব ও শিশুবান্ধব সর্বোপরি মানবিক পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এ দেশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পুলিশিং কার্যক্রমে অধিকতর জনসম্পৃক্ততা ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে তা অর্জন করা সম্ভব।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান অপরাধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বেনজীর বলেন, ‘সাইবার ওয়ার্ল্ড হুমকি তৈরি করছে, দেশের মানুষের জন্য, দেশের নাগরিকদদের জন্য। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’
প্রযুক্তি হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, যে প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে, সবই পশ্চিমাদের আবিষ্কার। এর ভালো দিক যেমন আমরা ব্যবহার করছি, সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে যে ঝুঁকি রয়েছে, সেই ঝুঁকির কাছে আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করতে চাই না। এই কারণেই সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে ইস্পাতকঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন টেকনোলজি আপডেট হয়। এ জন্য র্যাব-পুলিশকে টেকনোলজি আপডেটের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে থাকতে হবে।’