ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দুপল্লিতে চালানো তাণ্ডবের পাঁচ বছরেও বিচার পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ওই ঘটনায় হওয়া ৮টি মামলার মধ্যে কেবল একটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র জমা দিতে পেরেছে পুলিশ।
সেই মামলায় ২২৮ আসামির মধ্যে ১২৪ জন গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিনের মধ্যেই জামিনে ছাড়া পান সবাই।
পুলিশ বলছে, ঘটনার ফুটেজ ও ছবি দেখে আসামি শনাক্ত করতে হওয়ায় বাকি মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দিতে সময় লাগছে।
ধর্ম অবমাননার কয়েকটি ছবি ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর পোস্ট হয়েছিল রসরাজ দাস নামের এক জেলের ফেসবুক আইডি থেকে। পরে জানা যায়, স্মার্টফোন চালাতে জানেন না তিনি।
পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে ২৯ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে হওয়া মামলায় রসরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রসরাজ দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেসবুক কী আমি জানতাম না। ঘটনার দিন আমাকে একদল লোক মারতে মারতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমি গুরুতর আহত হই। তারা আমাকে মৃত ভেবে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে।’
পরে অবশ্য ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পান তিনি। রসরাজের মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও দিতে পারেনি পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার আগে পাঁচজন এই মামলার তদন্তে ছিলেন। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেব।’
রসরাজ গ্রেপ্তারের পরদিন ৩০ অক্টোবর তার বিচারের দাবিতে নাসিরনগরে সমাবেশ ডাকে দুটি ইসলামি সংগঠন। সেখান থেকেই ১৫টি মন্দির ও শতাধিক ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
ওই হামলার পর পুরো এলাকায় জোরদার হয় নিরাপত্তা। এর মধ্যে ৪ ও ১৩ নভেম্বর আবারও হামলা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ছয়টি বাড়িঘরে।
এসব ঘটনায় পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তদের করা আটটি মামলায় অজ্ঞাত ২ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়।
এই আট মামলার একটির তদন্ত শেষ হয় ১৩ মাসের মধ্যে। ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলায় ২২৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। তাদের মধ্যে ১২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও জামিন পেয়েছেন সবাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি জয়দুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ বছরেও মামলার কূলকিনারা না হওয়া বিচারহীনতার বহিঃপ্রকাশ। মন্দির ও হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীরা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পেত; তবে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও রংপুরে সম্প্রতি সহিংসতা ঘটত না। এ ধরনের অপরাধের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দুই মাসের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি মামলার শত শত আসামি। তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা কঠিন। এ জন্য প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে। ঘটনার ভিডিও এবং স্থিরচিত্র দেখে নিশ্চিত হয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। দ্রুত মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।’