পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা ঘুচিয়ে গত বছরের ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এরপর বাকি থাকা কাজ শেষ হয় ২০২১ সালে এসে।
তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলে উঠতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত সিট বরাদ্দের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না দেখায় হতাশ তারা।
৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মেসে ও ভাড়া করা বাসায় থাকছেন ছাত্রীরা। সশরীরে পরীক্ষা ও কয়েকটি বিভাগে ক্লাস শুরু হওয়ার পরও হলে সিট বরাদ্দ না পাওয়ায় হতাশ তারা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রীদের হলে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও যাচাই-বাছাইয়ের কাজও শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বলেন, ‘আবেদন শেষ হয়েছে। এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাছাইয়ের কাজ হবে। তবে যে সব শর্ত সাপেক্ষে ছাত্রীদের হলে সিটের জন্য নির্বাচন করা হবে, এসব ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিসি স্যার একটু ব্যস্ত থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগছে। আমরা আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে পারব।’
প্রভোস্ট বলেন, ‘হল বুঝে নেয়ার জন্য আমরা তিনটি কমিটি করেছি। লিফট, জেনারেটর, ফার্নিচার বুঝে নেয়ার কমিটি হয়ে গেছে। এখন শুধু বুঝিয়ে নেয়া বাকি আছে। ফার্নিচারগুলো একবার দেখা হয়েছে, আবার সরেজমিনে দেখে বুঝে নেয়া হবে। হলের জন্য জনবল দরকার সেটা আমি ভিসি স্যারকেও বলেছি।’
হলের সিট বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হলে যত সিট আছে, ঠিক তত ছাত্রী তোলার ইচ্ছা আছে আমার। হলে যেন পড়াশোনার পরিবেশ ঠিক থাকে, সেজন্যই আমার ইচ্ছা এটা। হলে উঠার শর্তগুলো মোটামুটি ঠিক করাই আছে, এখন উপাচার্যের সঙ্গে বসে সবকিছু চূড়ান্ত করব।’
হল হস্তান্তরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হল এখন হস্তান্তরের পর্যায়ে আছে। বাকি সব কাজ হয়ে গেছে। সিভিল কাজসহ কিছু সমস্যা ছিল। আমরা কয়েকজন লোক পাঠিয়েছিলাম, সেগুলো সলভ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ফার্নিচারের বিষয়ে একটা তথ্য এসেছিল যে সমস্যা আছে। সেটার জন্য একটা কমিটিও হয়েছে। প্রভোস্ট ম্যাম আহ্বায়ক, আমি সেক্রেটারি। আমরা ভিজিটও করেছি। যে সমস্যাগুলো ছিল, সেগুলো ঠিক করে দেয়ার কথা হয়েছিল। আমরা সেগুলো দেখার জন্য দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। এখন তো সেগুলো থেকে বাছাই করে নির্বাচন করতে হবে। এর জন্য একটু সময় লাগবে। এটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আমরা দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত সম্ভব ছাত্রীদের হলে উঠাতে পারি।’
ছাত্রী হলে সিট বরাদ্দের জন্য অনলাইনে আবেদন শুরু হয় ১ অক্টোবর, যা চলে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। ৬২৪টি সিটের বিপরীতে আবেদন পড়েছে প্রায় তিন হাজার। একটি সিটের বিপরীতে প্রায় পাঁচজন ছাত্রী। খেলাধুলাসহ অন্যান্য সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে যুক্তদের জন্যও বিশেষ কোটা রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদকপ্রাপ্তদের দেয়া হবে অগ্রাধিকার। প্রতিবন্ধী ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্যও কিছু কোটা রাখা হয়েছে।
১৬ তলা বিশিষ্ট হলটির ১৫৬টি কক্ষে চারজন করে মোট ৬২৪ জন ছাত্রী থাকতে পারবেন। হলের তৃতীয় থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি, ক্যানটিন ও ডাইনিং।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলটি নির্মাণের কথা ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর তৃতীয় দফায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।