বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘কাশিমপুর কারাগারে থাকা মিন্নির সঙ্গে বুধবার তার মায়ের কথা হয়। মিন্নি জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি ঘাড় ও দাঁতের ব্যথায় কাতর সে। খাবার খেতে পারছে না, ঘুম হচ্ছে না পর্যাপ্ত। এই মুহূর্তে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।’
মোজাম্মেল হোসেন আরও বলেন, ‘কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন মিন্নিকে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। কিন্তু এতে তার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি নেই, বরং অবনতি হচ্ছে। দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা গেলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’
প্রধান বিচারপতির কাছে মিন্নির উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। মিন্নির মা জিনাত জাহান বলেন, ‘ঘুম না হওয়ায় ক্ষুধামান্দ্যতে ভুগছে সে। ওর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রের কাছে আকুতি জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার হালিমা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শাহনেওয়াজ রিফাত হত্যা মামলায় স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। প্রত্যেককে অর্থদণ্ড করা হয় ৫০ হাজার টাকা করে। এরপর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ৪ অক্টোবর মৃত্যু পরোয়ানা নথিভুক্ত হয় হাইকোর্টে।
হত্যা মামলা থেকে খালাস পেতে গত ৬ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন মিন্নির আইনজীবী জেডআই খান পান্না। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ ৪ নভেম্বর আপিল গ্রহণ করে। আপিলটি শুনানির অপেক্ষায়।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাতকে। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি।
ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
রিফাতের বাবার করা মামলায় মিন্নিকে প্রধান সাক্ষীও করা হয়।
পরে পুলিশ জানায়, এটি ছিল মিন্নির ‘অভিনয়’। খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি স্বামীকে খুন করিয়েছেন। তার এই দ্বৈত ভূমিকার তথ্যে মামলাটি নিয়ে বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়।
বিচারক রায়ে মিন্নিকে এই হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। আসামিদের ফাঁসির আদেশ দেয়ার কারণ উল্লেখ করে তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুবসমাজের ভুল পথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।’