বাংলাদেশের মানুষ ভাত বেশি খায় বলে চালের সংকট- বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বরাত দিয়ে আসা বক্তব্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। বলেন, এমন কোনো কথাই তিনি বলেননি।
শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির এক সেমিনারে মন্ত্রী এমন কথা বলেন। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০২১: বাংলাদেশে প্রত্যাশা’।
চালের সংকট কমাতে কৃষিমন্ত্রী দেশের মানুষকে ভাত কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ধরনের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর মঙ্গলবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। সেখানে কৃষিমন্ত্রী দাবি করেন, ভাত কম খেতে বলেননি তিনি।
এরও তিন দিন পর সেনিমারে মন্ত্রী বলেছেন, ‘এ ধরনের কথা আমি কোনো দিনই বলি না। আমি এ প্রসঙ্গই আনিনি।
‘৭৭টি মিডিয়া আমার বক্তব্য কাভার করেছে। একটি ভুঁইফোঁড় পত্রিকা তারা নিউজ করেছে আমি নাকি বলেছি, মানুষ ভাত বেশি খায়, এ জন্য চালের দাম বেড়ে গেছে। এ ধরনের কথা আমি কোনো দিনই বলি না। আমি এ প্রসঙ্গই আনিনি।’
বাংলাদেশে মাথাপিছু ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘জাপান চার বেলা ভাত খায়, কিন্তু তাদের কনজাম্পশন ২০০ গ্রামেরও কম। সেখানে আমরা আগে ৪৩০ গ্রাম খেলাম, এখন এটা কমে ৩৭০ গ্রামে আসছে। আস্তে আস্তে কমছে। মানুষের যেহেতু আয় বাড়ছে, মানুষ এখন শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, মাছ, মাংস সেদিকেই বেশি যাচ্ছে।’
বিজ্ঞানীরা ধানের বিআর-৬৭ নামে একটা জাত আবিষ্কার করেছেন জানিয়ে তিনি জানান, উপকূলীয় এলাকায় এর চাষ হবে।
দেশে গমেরও জাত আবিষ্কার করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়েছে মন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন হোক আর না হোক, আমরা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা চালজাতীয় খাবারে অনেকটা আত্মনির্ভারশীল। যদি ভালো আবহাওয়া থাকে, আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। আমরা খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকি। কিন্তু এখন আমাদের লক্ষ্য হলো পুষ্টিজাতীয় খাবার। এটি আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বলেছি, আমরা পুষ্টিজাতীয় খাবার এবং সি ফুড মানুষকে দেব। এটাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। এটা করার জন্য কৃষিকে আধুনিকীকরণ করতে হবে। আমাদের কৃষকদের আয় বাড়াতে হবে, তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে হবে।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপকমিটির সদস্যসচিব দেলোয়ার হোসেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য় অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশে সেন্ট্রার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সিনিয়র সাংবাদিক কাওসার রহমান।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন ফারজানা মাহমুদ।