দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। আর পরোক্ষভাবে ধূমপান ও তামাকদ্রব্যের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন প্রায় সমপরিমাণ মানুষ। এ অবস্থায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে ছয়টি সুপারিশসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন দাবি করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, বিদ্যমান তামাক আইনে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। আইন অমান্য করেও সহজে পার পেয়ে যান অনেকে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। আইনটি শক্তিশালী করে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
বৃহস্পতিবার ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব দাবি তোলেন তারা। ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম (ডিজেএফবি) ও বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অফ দ্য রুরাল পুওর (ডরপ) এই ওয়েব সভার আয়োজন করে।
ডরপ মিডিয়া এবং অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর আরিফ বিল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবির সভাপতি এফ এইচ এম হুমায়ুন কবীর।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) গ্র্যান্ড ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিঞা।
তিনি বলেন, ‘সিটিএফকের সহায়তায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ অইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের উল্লিখিত দুর্বলতাগুলো সংশোধন করে আইনটি শক্তিশালী করার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করা সম্ভব।’
জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে আইনটি সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
মূল প্রবন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে ৬টি সংশোধনী সুপারিশ উপস্থাপন করেন ডরপ-এর টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রজেক্টের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম। সেগুলো হলো পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক দ্রব্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা। তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা বিক্রয় বন্ধ করা। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকজাত দ্রব্য মোড়কীকরণে কঠোর নিয়ম আরোপ করা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডরপ-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক যোবায়ের হাসান বলেন, ‘সাংবাদিকরা সব সময় জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছেন। তারা গণমাধ্যমে তামাক ও ধূমপানমুক্ত পরিবেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফিচার, প্রতিবেদন, কেস স্টাডি প্রকাশ করছেন। এতে অন্যদের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়।’
ডিজেএফবির সভাপতি এফ এইচ এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ধূমপান ও তামাকবিরোধী কনটেন্ট নিয়ে কাজ করা সব সময়ই চালেঞ্জিং। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে আমরা এটাকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে আমরা সব সময় বিভিন্ন প্রতিবেদন ও ফিচার প্রকাশ করে করে যাব।’