সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে নিজ ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, একজনকে হত্যার পর আরেকজন আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
তবে মরদেহের সুরতহাল ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পর পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি রহস্যজনক।
পৌর এলাকার কামারপাড়া গ্রামে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নিজ ঘরে পাওয়া যায় গৌরাঙ্গ ঘোষ ও তার স্ত্রী তমা ঘোষের মরদেহ। তমা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে।
ওই বাড়িটি গৌরাঙ্গের বাবার। সেখানে থাকেন তার মা ও ছোট ভাই। তারাই প্রথম মরদেহ দুটি দেখেন।
পরে বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানান, মরদেহ দুটি রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল।
এই বাড়ির পাশের বাড়িতে থাকেন অমল ঘোষ। তিনি জানান, গৌরাঙ্গ ও তমার বিয়ে হয় এক বছর আগে। তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল বলে তিনি শুনেছেন।
তিনি জানান, রাতের কোনো একসময় এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতে ওই বাড়ি থেকে কোনো ধরনের সাড়াশব্দ শোনা যায়নি। তার কাছে বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে।
গৌরাঙ্গের ছোট ভাই আনন্দ ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অন্য ঘরে শুয়ে ছিলাম। পরে সকালে মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে দেখি দাদা ঝুলে আছে, আর বৌদি রক্তমাখা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে।’
গৌরঙ্গের মা রুবী রানী ঘোষ বলেন, ‘রাতে আমরা একসঙ্গে বসে মিষ্টি বানিয়েছিলাম। এরপর খাবার খেয়ে যে যার ঘরে ঘুমাতে যায়। সকাল ১০টা বেজে গেলেও ওরা ঘুম থেকে ওঠেনি। তখন আমি অনেক ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের ডাকি। এরপর ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখি ওরা দুজনে পড়ে আছে। আমি পাশের ঘরে ঘুমাইছিলাম। কিছুই শুনতে পারিনি।’
তবে গৌরাঙ্গের ভাইয়ের দেয়া বর্ণনার সঙ্গে মরদেহের অবস্থা মেলেনি বলে জানান সিরাজগঞ্জের বেলকুচি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সিদ্দিক আহম্মেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মৃত্যুটি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। মৃত্যুর বিষয়টি উদঘাটন করতে পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই যৌথভাবে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে তমার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া গেলেও তার গলায় স্পষ্ট দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
‘গৌরাঙ্গের দুই হাতের কবজিতে রগ কাটা রয়েছে এবং গলার ওপর থুতনির নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জানা গেছে, তার দেহটি ঝুলন্ত ছিল। তবে পুলিশ গিয়ে দুটি মরদেহই মেঝেতে পেয়েছে।’