বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের ‘জাতিসত্তার অন্তরালে বিষাক্ত নিঃশ্বাস’ নামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘গতকাল ম্যাডামকে দেখতে গিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি এখন ভালো আছেন।
‘সবাই দোয়া করবেন, তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন এবং মুক্ত হয়ে ফিরে আসতে পারেন।’
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার বায়োপসি হয়। এরপর তার স্বাস্থ্য নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসে বিএনপি।
বায়োপসির পর কয়েক ঘণ্টা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে কেবিনে নেয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। সোমবার রাতেই তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয় বলে নিউজবাংলাকে জানান ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এটা তো আসলে অপারেশন ঠিক না। এটা একটা ডায়াগনস্টিক পার্ট। যেকোনো ছোটোখাটো কিছুর পরই আইসিইউতে রাখা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক ঘণ্টা আইসিইউতে রেখে রাতেই তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।’
‘লেখা ভুলে গেছি’
সাহস করে বই লেখার জন্য তৈমূর আলম খন্দকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা অনেকেই লিখতে পারি না। আমি লেখা ভুলে গেছি। পলিটিক্সের ঝামেলায় সব ভুলে গেছি। যখন জেলে ছিলাম, তখন কিছু লেখার চেষ্টা করেছিলাম।
‘পরে এসে দেখি ওটা এখন লেখা যাবে না; প্রকাশ করা যাবে না। প্রকাশ করতে গেলে এখন যতটুকু হাঁটাহাঁটি করছি, সেটাও করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অস্বাভাবিক, বিকৃত অবস্থা বিরাজ করছে। সবার আগে আওয়ামী লীগের বিচার হবে। এ জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাকে তারা একটি বিকলাঙ্গ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সমস্ত অর্জনকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্ট তারা শেষ করে দিয়েছে। আমাদের যে বিচারব্যবস্থা, সে বিচার ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের প্রশাসনকে তারা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করেছে।
‘আমাদের গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগের গণমাধ্যমে পরিণত করেছে। এটা আওয়ামী লীগের চরিত্রের পুরোনো ইতিহাস। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একইভাবে তারা দেশ পরিচালনা করেছে। শেষ পর্যন্ত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগকে জিজ্ঞাসা করলে এটা এড়িয়ে যায়। তারা গণতন্ত্র কথা বলে। এটা (বাকশাল) জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এই সরকার অবৈধ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের নয়। এরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন। আমরা এ নির্বাচন মানি না।
‘এ দেশের মালিক জনগণ। তারা একটি দিন পায়, যে দিনে তারা নিজেদের কথাটা, অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। সেটা হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। আওয়ামী লীগ সেই অধিকারটাও কেড়ে নিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচন হচ্ছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ছাড়া কিছু নাই। আর কেউ নির্বাচন করতে পারবে না।
‘এমপি ঘোষণা দিচ্ছেন, এখানে কোনো নির্বাচন হবে না; একজন চেয়ারম্যান থাকবে। বাকিরা যাদের আমি সিলেক্ট করে দেব তারাই হবে সদস্য। তারপরও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয় না। এটা তো রাষ্ট্রবিরোধী কথা।’
ওই সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অনেকে।