শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে চলছে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব তীর্থযাত্রা।
গারো পাহাড়ের বারোমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লিতে মহা খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হয় দুই দিনের এই উৎসব। এর অংশ হিসেবে রাত ৯টায় মোমবাতি জ্বালিয়ে পাহাড়ে শোভাযাত্রা করেন সারা দেশ থেকে যাওয়া প্রায় ২০ হাজার রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত।
প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ আলোক মিছিলে দুই বছর পর আলোকিত হয় গারো পাহাড়।
করোনার কারণে গত দুই বছর এই উৎসব হয়েছে সীমিত পরিসরে। সে সময় হয়নি এই আলোক শোভাযাত্রা।
‘ভ্রাতৃত্ব সমাজ গঠনে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মূল সুরের ওপর ভিত্তি করে এবারের উৎসবে মা মারিয়ার কাছে বিশ্বকে করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় মহা খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন বাংলাদেশের কার্ডিনাল পেট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি ৷ তাকে সহযোগিতা করেন ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।
এরপর রাত ৯টায় ভক্তরা মোমবাতি নিয়ে পাহাড়ে শোভাযাত্রায় বের হন। পাপ স্বীকার ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন।
শুক্রবার সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ ও মহা খ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসব শেষ হয়েছে।
নেত্রকোনার বিরিশিরি থেকে যাওয়া ক্যাথলিকভক্ত আঁখি মারাক বলেন, ‘পাপ মোচনসহ নানা সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে মা মারিয়ার কাছে ছুটে এসেছি। আমার সন্তানের অসুখের জন্য মানত ছিল, তাই এখানে এসেছি। আমার মানত ভালো হয়েছে।’
আরেক ভক্ত লিউনি নকরেক বলেন, ‘আমরা যেন ভালোভাবে শিক্ষা অর্জন করতে পারি, আগামী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারি, এ জন্য মা মারিয়ার সাহায্যের জন্য এসেছি।’
গারো পাহাড়ের নেত্রী কেয়া নকরেক বলেন, ‘আমাদের বারোমারী মিশনে সারা দেশ থেকে ক্যাথলিকসহ সব খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন, মা মারিয়ার কাছে সাহায্য চাইতে, পরিবারের শান্তির জন্য। আর এ বছর আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করছি, সারা বিশ্ব যেন করোনা থেকে মুক্ত হতে পারে।’
বারোমারী লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লিতে ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয় এই তীর্থযাত্রা উৎসব। এর পর থেকে প্রতিবছরই অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
তীর্থযাত্রার সেখানে মেলাও বসে। এবারও মেলা বসেছে, তবে কেনাকাটা অন্য বছরের চেয়ে কম হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ বলেন, ‘ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের এই উৎসব সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা সব সময় এর খোঁজখবর রেখেছি। আমাদের সবার সহযোগিতায় এ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।’