বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাড়ির আশায় ফেরিঘাটে দেড় দিন

  •    
  • ২৮ অক্টোবর, ২০২১ ২১:৫৯

পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটে বসে থাকা শরীয়তপুরের গাড়িচালক শাওন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো দুঃখ একটাই, আমরা মইরা গেছি নাকি বাঁইচ্চা আছি, ঘাটের লোকজন আর সরকারের কেউ আমাগো খোঁজ নেয় নাই। এইডাই আমাগো দুঃখ আর কষ্ট।’

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ আমানত শাহ নামে রো রো ফেরিডুবির দেড় দিন পরও উদ্ধার করা যায়নি সব যান।

বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওই দুর্ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ফেরির সঙ্গে ডুবে যাওয়া ১১টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। পানির নিচে শনাক্ত করা হয়েছে আরও চারটি।

দুর্ঘটনার পর থেকেই দুর্বিষহ সময় কাটছে ডুবে যাওয়া গাড়ির চালক ও সহকারীদের। ফেরিডুবিতে প্রাণে বাঁচলেও পানির নিচে এখন রয়েছে তাদের কয়েকটি যান।

এমন পরিস্থিতিতে ঘাটেই কাটছে তাদের সময়। গাড়ি কখন উদ্ধার হবে, সেই আশায় অধীর আগ্রহে বসে আছেন তারা।

তবে তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বা সরকার কেউই তাদের খোঁজ নেয়নি। গাড়ির সঙ্গে অনেকের কাছে থাকা টাকাপয়সা ডুবে যাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটে বসে থাকা শরীয়তপুরের গাড়িচালক শাওন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো দুঃখ একটাই, আমরা মইরা গেছি নাকি বাঁইচ্চা আছি, ঘাটের লোকজন আর সরকারের কেউ আমাগো খোঁজ নেয় নাই। এইডাই আমাগো দুঃখ আর কষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার ফেরি ডুবে যাওয়ার সময় আমরা কোনোমতে বাঁইচ্চা গেছি। তবে মালিকের তো অনেক ক্ষতি হইয়া গেল, গাড়িভর্তি পাউডার ছিল।

‘গাড়িডার খোঁজ নিলেও কেউ আমাগো খোঁজ নেয় নাই। এক দিন, এক রাইত গেল। আমরা (চালক) মরছি না বাঁইচ্চা আছি, ঘাটের লোকজন বা সরকারের লোকজন কোনো খোঁজ নিল না।’

দুর্ঘটনায় সঙ্গে থাকা সবকিছু নদীতে ডুবে গেছে জানিয়ে শাওন বলেন, ‘টাকাপয়সা কিচ্ছু নাই। খায়া না খায়া আছি আমরা। অপেক্ষা করতেছি, কখন গাড়িডা পানি থেইকা উঠাইব। গাড়িডা উঠাইলে মালিককে ফোন দিয়া চইলা যামু।’

অন্যের ফোন দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মা, বাবা, ভাই আর বউ খুব কান্নাকাটি করতেছে। তাগো কইছি, সব ভালো আছে। থাকন-খাওয়নে কোনো সমস্যা নাই। অথচ খালি পেটে বইসা আছি।’

ট্রাকচালকের সহযোগী গোপালগঞ্জের নাঈম শেখ জানান, আর কখনও তিনি গাড়িই চালাবেন না। চালকের সহকারী হলেও এলাকায় গাড়ি চালান তিনি। এবারের পর আর গাড়ি চালাবেন না।

নাঈম বলেন, ‘মরার হাত থিকা বাঁইচা আইছি। আমি আর গাড়ি চালামু না। বাপ-মায়ও কয়ছে, বাড়িতে আইসা অন্য কাম করবি। দরকার হইলে ব্যবসা করামু, তাও গাড়িতে যাইতে দিমু না তোরে।’

দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসের মাল নিয়া চাচার লগে গাজীপুর যাইতেছিলাম। বাড়ি থেইকা মানাও করছিল, কিন্তু আমি শুনি নাই। তারপরে তো ফেরি ডুইবা গেল।

‘আল্লাহর দয়ায় মরার হাত থিকা বাঁইচা আইছি। ফেরি ডুবার পরে বাবা-মায়ের লগে কথা কইছি। তারা খুব কান্নাকাটি করছে। পরে আমি আইতে মানা করছি।’

নাঈম আরও বলেন, ‘ফেরি ডুইবা যাওয়নের পরে আমাগো গাড়িডা নদীতে পইড়া যায়। এহনও নদীতে আছে। গাড়িডার কাছাকাছি বইসা আছি। আমাগো গাড়িডা টানে উঠলেই বাঁইচা যাই।

‘বাকিটা মালিকে দেখবনে। কারণ আমাগো দোষে তো আর পানিতে গাড়ি পড়ে নাই। তারপরও খারাপ লাগতেছে, মালিকের কত ক্ষতি হইল।’

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চালকরা যদি না খেয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। চালকদের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হবে, যাতে তাদের খোঁজখবর রাখেন।’

বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মোটরসাইকেল ও যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে আমানত শাহ নামে রো রো ফেরিটি নোঙর করছিল। ফেরি থেকে দু-তিনটি যানবাহন নামার পরপরই এটি কাত হয়ে ডুবে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর