আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকারকে নিজ ঘরে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সাইফুল ইসলাম ইউসুফ আশুলিয়া ইয়ারপুর গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে। রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এই মামলায় জড়িত সন্দেহে মোট তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (পিবিআই) সালেহ ইমরান জানান, এলিম সরকার হত্যা মামলার আসামি সাইফুল ইসলামকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
পিবিআই জানায়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ রাতে অন্যান্য দিনের ন্যায় রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে এলিম সরকার তার স্ত্রী-সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়েন। ২৮ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে এলিম সরকারের স্ত্রী ক্যামিলি তার শ্বশুরের বাড়িতে যান। আলাপ-আলোচনা শেষে ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরেন। এসে দেখেন এলিম সরকার মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তার গলার নিচে একটি, পেটে ১১টি ও পিঠে একটি ধারালো অস্ত্রের দাগ ছিল।
পিবিআই তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এলিমের স্ত্রীর চিৎকার এবং কান্নাকাটিতে লোকজন বাড়িতে এসে খাটের ওপরে তার মরদেহ দেখতে পান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান জানান, মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে গত ২১ জুলাই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেছেন তিনি। তিনি জানান, এর আগে গ্রেপ্তারকৃত রবিউল করিম পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে এলিম সরকারের বাসায় বিদ্যুতের মিটার লাগানোর কাজ করতে গিয়ে তার স্ত্রী ক্যামিলির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পিন্টুর।
সালেহ ইমরান বলেন, ‘বিষয়টি ক্যামিলির স্বামী টের পেয়ে গেলে তিনি তার স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ডেকে তা প্রকাশ করে দেবেন বলে জানান। এই ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে মারাত্মক দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। পরকীয়ার বিষয়টি যাতে অন্য কেউ জানতে না পারে সে জন্য ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ক্যামিলি এবং তার প্রেমিক পিন্টু মিলে এলিম সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।’
পিবিআই বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী পিন্টু তার অপর এক বন্ধু সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার দিন ২৮ মার্চ সকাল অনুমান ৯টার দিকে ক্যামিলির বাসায় প্রবেশ করেন। এর আগেই পিন্টুর দেয়া ঘুমের ওষুধ ক্যামিলি রাতের বেলা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে এলিম সরকারকে খাইয়ে দেন।
আসামির বরাতে এসআই সালেহ ইমরান বলেন, ঘুমের ওষুধ খেয়ে এলিম সরকার নিস্তেজ হয়ে গেলে সকালবেলা পিন্টু তার অপর সহযোগী সাইফুলকে নিয়ে বাসায় এসে চাকু দিয়ে কুপিয়ে এলিম সরকারকে হত্যা করে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার আগে এলিম সরকারের বাসার সিসিটিভি ফুটেজের ডিভিআর খুলে নিয়ে যান তারা।
পিবিআই জানায়, বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে স্ত্রী ক্যামিলি ডিস ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে উক্ত ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রচার করতে থাকেন।
তবে এলিম সরকারের বাবার দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই এলিমের স্ত্রী ও তার প্রেমিক পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আসামি পিন্টু এবং ক্যামিলি হত্যায় তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।