বনভূমিতে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা পুনর্বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হিসেবে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মধুপুর, শেরপুরের গারো পাহাড়, হিল ট্র্যাকস বা যেখানে যেখানে বন আছে সেখানে অনেক মামলা মোকদ্দমা আছে। অনেক জায়গায় একজনের বিরুদ্ধে ৫০টা মামলাও আছে। এখানে ১০টা মামলারও যদি হাজিরা দিতে হয় জীবন অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
‘এ কারণে প্রধানমন্ত্রী আজ পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন মামলাগুলো রিভিউ করে যেগুলোর যৌক্তিকতা নাই সেগুলো যথাসম্ভব তুলে নিতে হবে। মানুষকে কমফোর্ট করতে হবে। যেগুলো এক্সট্রিম মামলা সেগুলো আইন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দেখে যথাসম্ভব তুলে নিয়ে মানুষকে রিলিফ দেয়া যায় কিনা এটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
পাশাপাশি সংরক্ষিত বনভূমিতে যারা বসবাস করছেন তাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা যায় কিনা সে বিষয়টি দেখতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বলেন, বন সংরক্ষণ আইন ২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের সময় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘টাঙ্গাইলের আটিয়াতে প্রায় ৪৫ বা ৪৬ একর জমি ব্রিটিশ আমলেই সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করেছিল। পরে পাকিস্তান সরকারও এই আইনটিকে পরবর্তী ১০০ বছরের জন্য কার্যকর করে দেয়। ১৯৮২-তে একটি অর্ডিনেন্স জারি করা হয় আটিয়া ফরেস্ট প্রটেকশন অর্ডিনেন্স।
‘সেখানে বনের কেউ ক্ষতি বা ধ্বংসাত্মক কাজ করলে সেটিকে নন বেইলেবল অফেন্স হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেটা আজ এখানে নিয়ে আসা হয়। এতে মাত্র পাঁচটা ধারা। পাশাপাশি কয়েকটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি রুলিং দিয়ে দিয়েছেন।’
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘একটি হলো, একটি ডিজিটাল সার্ভে করতে হবে ইমিডিয়েটলি, এটা ভূমি মন্ত্রণালয়, বন মন্ত্রণালয় ও ডিসি সবাইকে নিয়ে। আটিয়া থেকে শুরু হবে। যেখানে যেখানে আমাদের বন আছে সেখানেই এটা করা হবে। এটা করে বনের মোট জমির মধ্যে কতটুকু এখনও বন আছে আর কতটুকুতে মানুষের বসতি তা বের করতে হবে।
‘এখানে যারা বসবাস করছে তারা কী অবস্থায় আছে, এখন তো তাদের তোলাও যাবে না এখান থেকে। কোথায় যাবে? তাদের বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়। যদি তারা সোজাসুজি বন এলাকায় না থাকে তাহলে তাদের সেখানেই সেটেলমেন্ট দেয়া যায় কিনা। অথবা অন্য কোনো খাস জমিতে স্থানান্তর করা যায় কিনা। অর্থাৎ তাদের একটি আবাসন করা যায় কিনা সেটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু আটিয়া না অন্য জায়গাতেও এটি শুরু হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই যে মানুষগুলো এখানে শত শত বছর ধরে আছেন তাদের একটি পার্মানেন্ট সেটেলমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে। সার্ভে না করলে কত মানুষ আছে সেটা বোঝা যাবে না। সার্ভে করতে বলা হয়েছে। বনের আশে পাশে যদি কোনো এলাকা থাকে যেখানে বসতি করলে বনের ক্ষতি হবে না তাহলে সেখানে রাখা যায় কিনা সেটা দেখতে হবে।
‘আরেকটি কাজ করতে হবে রিফরেস্ট্রেশনে যেতে হবে। বন অধিদপ্তর দেখবে, যারা যারা যেখানে আছে সেই এলাকার বাসিন্দাদের দিয়ে শেয়ার ফরেস্ট্রি করা যায় কিনা। এখন সরকার কিন্তু ৭০ ভাগই দিয়ে দিচ্ছে পরিচর্যাকারীকে। সামাজিক বনায়নের যে প্রকল্পগুলো হচ্ছে গাছ হওয়ার পরে ২০ বা ২৫ বছর পরে কাঠ হলে দামের ৭০ ভাগ পাচ্ছে পরিচর্যাকারী। এটা প্রধানমন্ত্রী আজ নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন যেসব জায়গায় বন এলাকা আছে, স্থানীয়দের ইনভলভ করতে হবে।’