প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে পাঁচ ধরনের মাদক। কোন মাদক কোন পথে আসছে, তা চিহ্নিত করার পর কারবারিরা পথ পরিবর্তন করছে। একেক ধরনের কারবারি একেক সীমান্ত ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ভারতের নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর মহাপরিচালক পর্যায়ে সপ্তম দ্বিপক্ষীয় সভায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
সভায় উপস্থিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, বুধবারের সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারত থেকে আসছে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, ইনজেকশন ও হেরোইন।
কী আলোচনা হয়েছে সভায়
সভায় উভয় পক্ষই সমুদ্রপথকে ব্যবহার করে মাদক চোরাচালান এবং মাদক কারবারিদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন পথ সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নীতিমালা ও বিধি-বিধান নিয়ে তথ্য বিনিময়, ফলপ্রসূ অপারেশনের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা বিনিময়, মাদকবিষয়ক প্রাসঙ্গিক অপরাপর সম্যক তথ্য বিনিময় এবং যথাসময়ে তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়।
সভায় মাদক চোরাচালান বন্ধে ভারতের উদ্যোগ বা কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মণ্ডল।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের ষষ্ঠ সভায় ভারতের সীমান্তে থাকা ফেনসিডিল কারখানার তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ। তালিকা অনুযায়ী যেসব কারখানা পাওয়া গেছে, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত। ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
কোন সীমান্ত দিয়ে আসে কোন মাদক
সভায় উপস্থিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন,
দেশে সবচেয়ে বেশি আসছে ফেনসিডিল। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিন দিকের সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে ফেনসিডিল ঢুকছে।
তিনি জানান, ভারতের সীমান্ত এলাকায় কারখানা স্থাপন করে এ সিরাপ তৈরি করা হচ্ছে। ফেনসিডিল নামটি বেশি পরিচিত হওয়ায় নতুন নতুন নামে এটি তৈরি করে বাংলাদেশে ঢোকানো হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, অন্তত পাঁচটি নামে ফেনসিডিল দেশে আসছে। বোতলজাত অবস্থায় আসার পাশাপাশি বড় ড্রাম ও পলিথিনে করেও সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল আসে।
আগের চেয়ে ফেনসিডিলের ব্যবহার কমলেও সম্প্রতি এটি বেড়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
কোরেক্স, এসকাফ, এমকে ডিল (কোডিন ফসফেট), কোডোকফ নামের ফেনসিডিলজাতীয় এ মাদক আসে ভারত থেকে বাংলাদেশে।
সভায় আলোচনার বরাত দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গাঁজা পাচারের জন্য চোরাকারবারিরা নতুন নতুন পথ তৈরি করছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে গাঁজা বেশি পাচার হয়ে দেশে প্রবেশ করছে।
তারা জানান, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে হেরোইন পাচার বেড়েছে। উদ্ধার হওয়া হেরোইন চালান তা-ই নির্দেশ করে।
সভায় বাংলাদেশ জানায়, ইয়াবা পাচারে ভারতের রুটও ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকানো হয়। ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ব্যবহার হচ্ছে এ ক্ষেত্রে।
ভারতকে এ বিষয়ে আরও তৎপর হয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
ভারত থেকে বিভিন্ন ইনজেকশন প্রবেশ করছে জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে।
দুই দেশের কারবারিরা মাদক কেনাবেচার জন্য ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করছে বলে সভায় আলোচনা হয়। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, মাদকের জন্য হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সভায় বলা হয়, দেশে কোনো মাদক উৎপাদন না হলেও বাংলাদেশ এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। সমস্যা সমাধানে ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করলেও সঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে না মিয়ানমারের। ভয়াবহ মাদক ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকেই। নতুন করে যুক্ত হয়েছে আইস।
এ নিয়ে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক চায় বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রধানের ভাষ্য
সভায় সার্বিক বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মাদক পাচারের নতুন নতুন রুট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কিছু তথ্য দিয়েছি। তারাও কিছু তথ্য দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সীমান্ত থাকায় উভয় দেশ আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব বহন করে। আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য দুই দেশই ভূমিকা রাখবে।’
মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে মাদক সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হতে হবে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে। ভারতও এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার মাদক বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। নিলে এ হারে মাদক আসত না।’
মাদক চোরাচালান বন্ধে ভারতের উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি।