বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আসলামুলের ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের কী হবে

  •    
  • ২৮ অক্টোবর, ২০২১ ১০:০৬

ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক মারা যান গত ৪ এপ্রিল। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসাও করতেন। আবাসন ব্যবসায় তার বড় বিনিয়োগ ছিল। পাশাপাশি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পেয়েছিলেন। আসলাম ব্যবসার মূলধন জোগাড় করেছেন প্রধানত ব্যাংক থেকে। আর এই মুহূর্তে ব্যাংকের দায় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। অনাদায়ী সুদযুক্ত হয়ে দিন দিন বাড়ছে এই অঙ্ক।

প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুর পর তার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান মাইশা গ্রুপের বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নিয়ে তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা।

আসলামুলের মৃত্যুতে তার ব্যবসার হাল ধরেছেন স্ত্রী মাকসুদা হক। তবে তিনি সব টাকা দিতে পারবেন না বলে বিভিন্ন ব্যাংককে জানিয়েছেন। কোনো ব্যাংককে সুদ, কোনো ব্যাংককে আসলের অংশ মওকুফ করার অনুরোধ করেছেন।

মাইশা গ্রুপের ঋণ ছিল পাঁচটি ব্যাংকে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকাই আছে ন্যাশনাল ব্যাংকে। এরই মধ্যে এই ঋণের একটি অংশ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাকিগুলোও খেলাপি ঘোষণার পর্যায়ে আছে।

আসলাম পত্নীর আবেদনের পর অন্তত তিনটি ব্যাংক তাদের পর্ষদ বৈঠকে বিষয়টি তুলেছিল, কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, আসল বা সুদ-কোনোটা মওকুফের সুযোগ নেই।

ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক মারা যান গত ৪ এপ্রিল। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসাও করতেন। আবাসন ব্যবসায় তার বড় বিনিয়োগ ছিল। পাশাপাশি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পেয়েছিলেন।

আসলাম ব্যবসার মূলধন জোগাড় করেছেন প্রধানত ব্যাংক থেকে। আর এই মুহূর্তে ব্যাংকের দায় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। অনাদায়ী সুদ যুক্ত হয়ে দিন দিন বাড়ছে এই অঙ্ক।

আসলামের মৃত্যুর পরই এই ব্যাংক ঋণের কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই অনিশ্চয়তা আরও বড় হয়েছে এ কারণে যে গত ছয় মাসেও ব্যাংককে টাকা ফেরত দেয়া যায়নি। উল্টো সুদ দিতে অপারগতা জানিয়ে অন্তত পাঁচটি ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছেন আসলাম পত্নী। আসল পরিশোধেরও চেয়েছেন দীর্ঘ সময়।

তবে এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে মার্কেন্টাইল, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক। আর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে মাইশার সঙ্গে যোগাযোগ চালু রেখেছে ন্যাশনাল ব্যাংক।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঋণের সুদ মওকুফের কোনো সুযোগ নেই। এটা আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠকও হয়েছে। ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংকের ‍দুটি গ্যারান্টি ছিল। ৩০ ও ৩৫ কোটি টাকার ওই দুটি ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন করার জন্য আমরা ন্যাশনাল ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। তারা দেবে বলেছে। ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ সমন্বয় করা না হলে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ জানাব।’

মাইশা গ্রুপের যত ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, প্রয়াত আসলামুল হকের মালিকানাধীন ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জে অনুমোদন পাওয়া রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নামে ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। তার মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এটিই শুধু উৎপাদনে আসতে পেরেছিল।

ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেডের নামে ৩৭৮ কোটি টাকা ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেডের নামে ৭৯ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।

রিয়েল এস্টেট কোম্পানি মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে ঋণ রয়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা।

একই গ্রুপের কোম্পানি মাহিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে ৩৮০ কোটি ও মাহিম ট্রেড লিংক লিমিটেডের নামে ১১ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

সব মিলিয়ে গ্রুপটির কাছে দেশের ব্যাংক খাতের পাওনা প্রায় ৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে মায়শা গ্রুপের করপোরেট অফিস

মাকসুদা হকের আবেদন

মাইশা গ্রুপের ছয় কোম্পানিকে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের বিষয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাংককে চিঠি দিয়েছেন আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক।

বেসরকারি ন্যাশনাল, মার্কেন্টাইল ও এক্সিম এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ও জনতা ব্যাংককে দেয়া চিঠিতে ঋণের সুদ পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে মাকসুদা হক বলছেন, ব্যাংক ঋণের কোনো সুদ তিনি পরিশোধ করতে পারবেন না। শুধু আসলের সমপরিমাণ অপরিশোধিত অর্থ তিনি পরিশোধ করবেন। সে জন্যও তার দীর্ঘ সময় দরকার।

মাকসুদা হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সুদ মওকুফের আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা জানি না।’

ন্যাশনাল ব্যাংকের কমিটি

মাইশা গ্রুপের কাছে সবচেয়ে বেশি পাবে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক বা এনবিএল। গ্রুপের চার কোম্পানির কাছে তাদের পাওনা ২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

অর্থাৎ মাইশার মোট ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশই ন্যাশনাল ব্যাংকের।

সম্প্রতি দুই কোম্পানির কাছে পাওনা ৯০১ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ব্যাংক। ব্যাংকটির জেড এইচ সিকদার মেডিক্যাল কলেজ শাখার গ্রাহক মাইশা প্রপার্টির ৬৬৩ কোটি টাকা এবং মাইশা রিয়েল এস্টেটের ২৩৮ কোটি টাকার ঋণ সম্প্রতি খেলাপি করা হয়েছে।

সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানির এক হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার ঋণও খেলাপি করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

ব্যাংকটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মাইশা গ্রুপের সঙ্গে ব্যাংক নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখছে। ঋণ আদায় কীভাবে হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা চাচ্ছি প্রয়াত আসলামুল হকের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসুক। বিদ্যুৎকেন্দ্র চললে আমরা ব্যাংকের টাকা ফেরত পাব।’

ছাড় দিতে চায় না কোনো ব্যাংক

মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কাছে ৩১ কোটি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের গাড়ি ঋণ বাবদ ৩ কোটি টাকা পাবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ব্যাংকটির পাওনা ৩৪ কোটি টাকার বিপরীতে মাত্র ৪ কোটি টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দিয়েছে মাইশা গ্রুপ।

বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদে তুলেছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। পরিচালনা পর্ষদও এরই মধ্যে আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাইশা গ্রুপের আবেদনটি মার্কেন্টাইল ব্যাংক পর্ষদ এরই মধ্যে নাকচ করে দিয়েছে।’

দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটিতে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক পাবে ৩৮০ কোটি টাকা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) থেকে ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেডে গেছে ৮০ কোটি টাকা।

এই কেন্দ্র দুটি আদৌ উৎপাদনে আসতে পারবে কি না- এ নিয়ে আছে সংশয়। কেন্দ্র দুটি বাতিলের আলোচনাও আছে।

এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে নেয়া ঋণের সুদ মওকুফের আবেদন আছে আসলামপত্নীর চিঠিতে।

তবে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাইশা গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আনার উদ্যোগ নেয়াই ছিল উত্তম বিকল্প। অন্য কোনো কোম্পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো টেকওভার করতে চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

জনতা ব্যাংকও সুদ মওকুফে নারাজ। ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানির যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। ঋণপত্রের অর্থ জার্মানির একটি কোম্পানিকে পরিশোধও করেছিল ব্যাংকটি।

এই ঋণের সুদ মওকুফে মাইশা গ্রুপের আবেদনটি জনতা ব্যাংকের পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু পর্ষদ সেটি নাকচ করে দেয়।

এ বিভাগের আরো খবর