কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে আশিষ মল্লিক নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি ধারাবাহিকভাবে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ র্যাবের।
প্রাথমিক তদন্তের পর র্যাব দাবি করেছে, আশিষ মল্লিক একটি ফেসবুক পেজ খুলে তার অ্যাডমিন হিসেবে নানা রকম অপপ্রচার চালাতেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন নৃশংস ঘটনার ভিডিও আপলোড করে তা বাংলাদেশের বলে প্রচার করছিলেন। জনমনে ভয়ভীতি তৈরিসহ নানা রকম উসকানি দিচ্ছিলেন তিনি। তার দেয়া প্রতিটি পোস্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টা ছিল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
আশিষ মল্লিকের গ্রেপ্তার বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। ছবি: সংগৃহীত
র্যাব জানায়, রাজধানীর বনানী থেকে মঙ্গলবার রাতে আশিষ মল্লিককে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সাইবার অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
আশিষ মল্লিকের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছিলেন।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক জানান, আশিষ গত ১৬ অক্টোবর একটি ফেসবুক পেজ খোলেন। সেখানে ও তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য পোস্ট করছিলেন তিনি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও সহিংসতা বিস্তার ছিল তার লক্ষ্য।
সমমনা কয়েকজন ব্যক্তিকে ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন হিসেবে যোগ করেন আশিষ। অল্প সময়েই তাদের পেজের সদস্য ও ফলোয়ার কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই পেজ থেকে তারা কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও উসকানিমূলক পোস্ট দেয়া শুরু করেন।
র্যাব আরও জানায়, আশিষ মল্লিকের ফেসবুক পেজ থেকে পার্বত্য জেলার একজন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের হুমকি দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান।’ যা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা।
নোয়াখালীতে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির পায়ের রগ কেটে পুকুরে ফেলে দেয়ায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয় এই পেজে। দুর্ঘটনায় পঞ্চগড় ও গাইবান্ধায় বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে অপপ্রচার করা হয়।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গুপ্টি গ্রামে বীরেশ্বর কর্মকারের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে তিনি মনগড়া পোস্ট দেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই দেশে জন্মই যেন অভিশাপ বলেও মন্তব্য লেখেন তিনি।
এ ছাড়া চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে ধর্ষণ চলছে বলেও অপপ্রচার করা হয়। রংপুরের ঘটনাকে ১৯৭১ সালের পুনরাবৃত্তি বলে তুলনা করা হয় পেজটিতে। সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে উসকানিমূলক ও ভুল তথ্য দেয়া হয় সেখানে।