পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি টানা তৃতীয় বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এক বছর আগে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিটি এবার আগের বছরের তুলনায় লোকসান কিছুটা কমাতে পেরেছে। তবে আগের দুই বছরের ধারাবাহিকতায় ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে পরিচালনা পর্ষদ।
বুধবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ওসমানিয়া গ্লাস শেয়ার প্রতি ৬ টাকা ৬৬ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৭টাকা ২১ পয়সা।
কোম্পানিটি লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ঠিক করেছে আগামী ২৪ নভেম্বর। লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে ২৬ ডিসেম্বর।
উসমানিয়া টানা ছয় বছর ধরে লোকসান দিয়ে আসছে। এর মধ্যে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছর ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিলেও এরপর থেকে আর তা দেয়া হয়নি।
গত বছরের ২৩ জুন আগুন লেগে কারখানার একটি চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ওই চুল্লিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে থেকে বন্ধ ছিল অন্য চুল্লিটি। দুর্ঘটনার পর দুটি চুল্লি বন্ধ থাকায় কারখানার উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়।
১৪ মাস পর গত সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি উৎপাদনে ফিরেছে। তবে সেটি মুনাফায় ফিরবে, এমন আশা করছেন না কর্মকর্তারাই।
কোম্পানিটির পণ্য উৎপাদন খরচ বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গ্লাস শিট উৎপাদনে খরচ হয় ৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রায় অর্ধেক মূল্যে গ্লাস বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি আয় করে ২ কোটি ৫৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লোকসান হয় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি সিবিএর সভাপতি শেখ তাজ উদ্দিন বলেন, ‘গ্লাস উৎপাদনের তিনটি মেশিনই পাকিস্তান আমলের। পুরোনো মেশিনে উৎপাদন কমে এসেছে। উন্নত প্রযুক্তির মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে কারখানা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আশা করছি, সরকার নতুন রূপে আধুনিক মানের মেশিন স্থাপন করে কারখানা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেবে।’
চট্টগ্রামের কালুরঘাটের উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি ১৯৫৯ সালে সাদা রঙের গ্লাস শিট উৎপাদন শুরু করে। একসময় দেশে গ্লাস সরবরাহের অন্যতম ভরসা ছিল এই প্রতিষ্ঠান। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে এই প্রতিষ্ঠানে ৩০০ জন কর্মরত আছেন।
বেসরকারি খাতে পিএইচপি, নাসির ও এমইবি গ্লাস আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বর্তমানে উন্নত মানের কাচ তৈরি করছে। এসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনক্ষমতা নিয়মিত বাড়ালেও কাচশিল্পকে পথ দেখানো উসমানিয়ার লোকসান প্রতিবছর বাড়ছে।
বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়ে আসলেও উসমানিয়ার শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য আকর্ষণীয়। তবে প্রতি বছরই তা কমে আসছে।
২০১৮ সালে শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটির সম্পদ ছিল ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা। গত বছর তা কমে আসে ৯২ টাকা ৪৪ পয়সা। এবার তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৮২ পয়সা।