বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে দেশে উদ্যোক্তা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার-২০২০’ দিতে যাচ্ছে সরকার।
এ বছর ২৩ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
পণ্য বহুমুখীকরণ, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও শিল্প খাতে সৃজনশীলতা বাড়াতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতি বছর সাত ক্যাটাগরিতে দেয়া হবে এ পুরস্কার।
এর মধ্যে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ৪, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ৪ এবং ক্ষুদ্র শিল্প, মাইক্রো শিল্প, হাইটেক শিল্প, হস্ত ও কারু শিল্প এবং কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে তিনটি করে প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পাচ্ছে।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার নির্বাচিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার এসব তথ্য জানায় শিল্প মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর শিল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে শিল্পায়নের যে সূচনা হয়েছিল, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২০’ প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশ তার সে অবদানকে স্মরণীয় ও বরণীয় রাখবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি প্রদানের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মাধ্যমে শিল্পায়নের ক্রমবিকাশকে টেকসই করবে।”
ওই সময় শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কারের জন্য উদ্যোক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিল্প খাতে তার সামগ্রিক অবদানকে বিবেচনা করা হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার, আমদানি হ্রাস, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন, স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামাজিক দায়িত্ব পালন, নিষ্কণ্টক ভূমি এবং ভূমির পরিকল্পিত ও দক্ষ ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণের মতো ক্ষেত্রে অবদান বিবেচনা করা হবে। প্রয়াত শিল্প উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে দেয়া হবে মরণোত্তর পুরস্কার।
তবে পুরস্কারের জন্য মনোনীত শিল্প উদ্যোক্তা/শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হতে হবে বাংলাদেশেই। নিয়মিত কর পরিশোধ করতে হবে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ বা আমদানিবিকল্প বা রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর অবদান রাখতে হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে মামলা চললে কিংবা ৬ মাসের বেশি দণ্ডিত হলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরবর্তী দুই বছর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবে না।
ঋণখেলাপি, সরকারি বিলখেলাপি, করখেলাপি, অর্থ পাচারকারী, সরকারি জায়গায় অবৈধ দখলদার ও পরিবেশ দূষণকারী শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানও এই সম্মানজনক পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে না। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান একবার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হলে একই ক্যাটাগরিতে পরবর্তী তিন বছরের জন্য তার আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
এ বছর পুরস্কার পাচ্ছে যারা
বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পাচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউক্যালস লিমিটেড। দ্বিতীয় পুরস্কার পাচ্ছে জজ ভূঞা টেক্সটাইল মিলস। যৌথভাবে তৃতীয় পুরস্কার পাচ্ছে আদুরী অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড।
মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম পুরস্কার পাচ্ছে অকো-টেক্স লিমিটেড ও ফরচুন সুজ লিমিটেড। দ্বিতীয় পুরস্কারও যৌথভাবে নিচ্ছে রহিম আফরোজ রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড এবং মাধবদী ডাইং ফিনিশিং মিলস লিমিটেড।
ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটারিতে পুরস্কার পাচ্ছে তিন প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে আমান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রথম, এসআর হ্যান্ডিক্রাফটস দ্বিতীয় এবং আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পাচ্ছ তৃতীয়টি।
মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেতে যাচ্ছে আরও তিন প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে প্রথম পুরস্কার পাচ্ছে জামালপুরের মেসার্স কারুকলা। ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডার ট্রিম টেক্স বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং পাচ্ছে তৃতীয় পুরস্কার।
হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া তিন প্রতিষ্ঠানই ঢাকার। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড প্রথম, সুপার স্টার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড দ্বিতীয় এবং মীল টেলকম লিমিটেড তৃতীয় পুরস্কার পাচ্ছে।
হস্ত ও কারুশিল্প ক্যাটাগরিতে ঢাকার ক্লাসিক হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্টস বিডি প্রথম, যশোরের আয়োজন দ্বিতীয় এবং সোনারগাঁওয়ের সোনারগাঁ নকশী কাঁথা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা পাচ্ছে তৃতীয় পুরস্কার।
কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে কুমিল্লা আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস প্রথম, নারায়ণগঞ্জের রংমেলা নারী কল্যাণ সংস্থা দ্বিতীয় এবং ঢাকার উত্তর বাড্ডার অগ্রজ পাচ্ছে তৃতীয় পুরস্কার।