নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় একবার নয়, পরপর তিনবার বাড়িঘর ভেসে যায় বিবি সালমা ও মোহাম্মদ আলী আসগরের। ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় একপর্যায়ে ঢাকায় আসতে বাধ্য হন এ দম্পতি। থাকেন রাজধানী শহরের উপকণ্ঠে ১০০ বর্গফুটের এক বস্তিঘরে।
বাংলাদেশে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে দেখানো হয়, শুধু সালমা-আসগরই নন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাখ লাখ মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে ভিড় করেছেন রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর ব-দ্বীপটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্থানান্তর দেখতে যাচ্ছে।
সালমার বাড়ি ভোলায়। তিনি বলেন, ‘বন্যার সময় আমাদের বাড়ি কীভাবে পানির নিচে তলিয়ে যায়, আমার তা মনে আছে। এত দ্রুত পানি ঢোকে যে বাড়ির ছাদ কয়েক মিনিটের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।’
সালমা আরও বলেন, ‘নদী ওই সময় ভয়ংকর রূপ নেয়। এটি ধীরে ধীরে আমাদের কৃষিজমি খেয়ে ফেলে। এরপর একদিন আমাদের বাড়ির কাছে নদীর পানি চলে আসে। আমাদের বাগান, ভিটেমাটি সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিছুই বাদ যায়নি।’
সালমার স্বামী আসগর এখন আখের রস বিক্রি করে সংসার চালান। তার দৈনিক আয় সাড়ে ৬০০ টাকার মতো।
পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে মানিকগঞ্জের আফসার দেওয়ান বলেন, ‘এখানে দুটি মাদ্রাসা ও মসজিদ ছিল। কোনোটিই এখন আর নেই। কবরস্থানও নদীর জলে তলিয়ে গেছে। আমার মা-বাবা আর চাচাদের এই কবরে দাফন করা হয়।’
ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়িঘর ছাড়তে হয়। তাদের বেশির ভাগই হয় এখন ঢাকা, নয়তো চট্টগ্রামে রয়েছেন।
বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ২০৫০ সালের মধ্যে আরও ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভিটেমাটিহারাদের একটা অংশ দেশের বাইরেও পাড়ি দেন। প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চাকরির উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভির শাকিল জয় বলেন, ‘গত দুই বছরে ভিটেমাটিহারাদের জন্য হাজার হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বাস্তুচ্যুতর বেশির ভাগই জলবায়ু শরণার্থী। তারা নদীভাঙনের শিকার।’
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্র্যাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের পর থেকে প্রতিবছর পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রপাড়ের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাড়িঘর হারান।
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিইজিআইএসের উপদেষ্টা মমিনুল হক সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশে ঘরহারা মানুষের বার্ষিক সংখ্যা এক লাখের বেশি।’