পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি মঙ্গলবার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।
এদিন মোট ১৪টি কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার কথা থাকলেও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি বা কেপিসিএল অনিবার্য কারণে তা দুই দিনের জন্য স্থগিত করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার তারা লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাকি ১৩ কোম্পানির মধ্যে নিউজবাংলা ১১ কোম্পানির লভ্যাংশের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে একটি ল্যাবরেটরিজ, সেটি বিনিয়োগকারীদেরকে শেয়ারে দেবে আড়াই টাকা করে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দেবে কপারটেক, যেটি বিনিয়োগকারীদেরকে শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে দেবে।
এসব কোম্পানির মধ্যে তিনটি প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এগুলো এ বছরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
সবগুলো কোম্পানিই নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্তও জানিয়েছে।
এসব কোম্পানির মধ্যে দুটি লোকসান দেয়ার পরও লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
একমি ল্যাবরেটরিজ
কোম্পানিটি গত বছরের মতোই এবারও ২৫ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি আড়াই টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৭ টাকা ৪২ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ৬ টাকা ৮৫ পয়সা। আয় বেড়েছে ৫৭ পয়সা বা ৮.৩২ শতাংশ।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট
গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রিমিয়ার সিমেন্ট ২০ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ২ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এ সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬ টাকা ১৮ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ২ টাকা ৫৫ পয়সা।
তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল
ওভার দ্য কাউন্টারে (ওটিসি) থাকার সময় টানা চার বছর লভ্যাংশ দেয়া তজিমউদ্দিন টেক্সটাইল মূল মার্কেটে ফেরার বছরও শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। অর্থাৎ শেয়ারধারীরা শেয়ারপ্রতি ২ টাকা পাবেন লভ্যাংশ হিসেবে।
এই প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৫ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ১৮ পয়সা।
আফতাব অটোমোবাইল
শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৯৪ পয়সা লোকসান করেও বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করল এই কোম্পানিটি।
এবার শেয়ারধারীদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক নগদ এবং অর্ধেক বোনাস। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা এবং প্রতি ২০টি শেয়ারের বিপরীতে একটি করে বোনাস শেয়ার পাওয়া যাবে।
নাভানা সিএনজি
জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্যও ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে অর্ধেক নগদ এবং অর্ধেক বোনাস।
অর্থাৎ এবার বিনিয়োগকারীরা শেয়ারপ্রতি পাবেন ৫০ পয়সা করে। সঙ্গে প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি দেয়া হবে বোনাস হিসেবে।
এই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করে ২২ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৯০ পয়সা।
ন্যাশনাল টি
টানা দ্বিতীয় বছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়ার পরও বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল টি।
২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৩১ টাকা ৭১ পয়সা লোকসান দিয়েছে। তারপরও রিজার্ভ থেকে শেয়ার প্রতি এক টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগের বছর ৫৫ টাকা ৭১ পয়সা লোকসান করে কোম্পানিটি ৫০ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ দেয়।
এডিএন টেলিকম
শেয়ারধারীদেরকে এবার ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা পাবে এক টাকা করে। আগের বছর শেয়ার প্রতি দেড় টাকা, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয়।
২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত এডিএন শেয়ার প্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৫৭ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ২ টাকা ৮৬ পয়সা।
কপারটেক
আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করে লভ্যাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি কপারটেক।
তবে লভ্যাংশ বাড়ালেও তা খুব একটা আকর্ষণীয় হয়নি। আগের বছর শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটি এবার ৫০ পয়সা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২ পয়সা। গত অর্থবছরে এই আয় ছিল ৩৫ পয়সা।
নতুন তিন কোম্পানি
চলতি বছর তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানিও নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড
বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৪ টাকা করে শেয়ার বিক্রি করা প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির বছরে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি পাবেন ১ টাকা ২৫ পয়সা করে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪ টাকা ২১ পয়সা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে শেয়ার সংখ্যা কম থাকার সময় এই আয় ছিল ৩ টাকা ৪৩ পয়সা।
এনার্জিপ্যাক
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩১ টাকা করে শেয়ার বিক্রি করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকৌশল খাতের কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার তালিকাভুক্তির বছরে সাড়ে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি পাবেন ১ টাকা করে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে শেয়ার সংখ্যা কম থাকার সময় এই আয় ছিল ২ টাকা ৮৩ পয়সা।
ই-জেনারেশন
এই কোম্পানিটিো তালিকাভুক্ত হয়েছে চলতি বছর। তারা বিনিয়োগকারীদেরকে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি পাবেন ১ টাকা করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৬১ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ১ টাকা ৫৫ পয়সা।