বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পেকুয়ার সেই ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ‘সাজানো’

  •    
  • ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ২১:৫১

ফাঁস হওয়া অডিওতে জালাল উদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি একা প্রশাসনের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। ওসির সঙ্গে বাড়াবাড়ি তাও আমি করেছি। যখন তারা কক্সবাজারে যায়, তখন অস্ত্রের ব্যাগ আমার হাতে থাকে। ধর্ষণ মামলা সাজাতে বিশ্বস্ত কাউকে না পেয়ে ওই নারীকে আমিই ধর্ষণ করেছিলাম, যেন মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণ হয়।’

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ২০১৪ সালে থানার তখনকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন এক গৃহবধূ। অভিযোগ করা হয়, আইনি সহায়তা চাইতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী।

তবে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক ফোন রেকর্ডে জানা যায়, ঘটনাটি ছিল সাজানো। পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয় ওসি হাবিবকে।

২০১৪ সালে স্থানীয়দের আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে বদলি করা হয় ওসিকে। এসব আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা ও স্থানীয় যুবলীগের কয়েকজন নেতা।

দীর্ঘদিন পর ফাঁস হওয়া ফোনের অডিও রেকর্ডে শোনা গেছে, সে সময় ওসি হাবিবুরের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া যুবলীগ নেতা জালাল উদ্দিনই ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছিলেন।

ফাঁস হওয়া অডিওতে জালাল উদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি একা প্রশাসনের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। ওসির সঙ্গে বাড়াবাড়ি তাও আমি করেছি। যখন তারা কক্সবাজারে যায়, তখন অস্ত্রের ব্যাগ আমার হাতে থাকে। ধর্ষণ মামলা সাজাতে বিশ্বস্ত কাউকে না পেয়ে ওই নারীকে আমিই ধর্ষণ করেছিলাম, যেন মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণ হয়।’

আরও বলতে শোনা যায়, ‘অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। যদি ডিএনএ টেস্ট করা হতো তবে ফেঁসে যেতাম। এসব তো সামান্য। আরও অনেক বড় বড় কাজ আমি করেছি।’

এই জালাল উদ্দিন পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ওসি হাবিবের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১০ জুলাই জমিসংক্রান্ত বিরোধের একটি অভিযোগ নিয়ে ওই নারী পেকুয়া থানায় গেলে এক কনস্টেবল ওসি হাবিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাকে বাসায় যেতে বলেন। ওই দিন রাত ১০টায় ওসির বাসায় গেলে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

ওই বছরের ১৪ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই নারী। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

তোফায়েল আহমেদ যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন, তাতে ওসি হাবিবের দায় পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন ওসি হাবিবুর। তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে ওই গৃহবধূকে দিয়ে ধর্ষণ মামলাটি করিয়েছিল।

পরে মামলার অভিযোগ থেকে ওসি হাবিবকে অব্যাহতি দেয় আদালত।

অভিযোগ আছে, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালালসহ পেকুয়া উপজেলায় একটি সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা নিয়মিত চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

পেকুয়া থানায় তৎকালীন দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ পরিদর্শক নিউজবাংলাকে জানান, জালাল অনেক পুলিশ সদস্যকে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে নারীদের সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করতেন। আর এসবের ভিডিও ধারণ করে পরবর্তী সময়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ধর্ষণ মামলার বাদী ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমি সম্প্রতি ওমরাহ করে ফিরেছি। এসব বিষয়ে এখন কোনো কথা বলতে চাই না।’

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই গৃহবধূর এক আত্মীয় বলেন, ‘ওসি হাবিবুরের বিরুদ্ধে তাকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করতে বাধ্য করেছিলেন যুবলীগ নেতা জালাল।

‘বিভিন্ন সময় মামলার বাদী গৃহবধূকে জালাল ধর্ষণ করতেন। প্রশাসনের সহায়তা পেলে ওই গৃহবধূ জালালের বিরুদ্ধে মামলা করতেও প্রস্তুত।’

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ভিলেজ পলিটিক্স ও ষড়যন্ত্রের শিকার আমি।’

নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধও করেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে পেকুয়া থানার তৎকালীন ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ওই মামলায় আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তবে এ ঘটনায় এতটা অপদস্থ হয়েছি, যা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না।’

গত বছর চাকরি থেকে অবসরে গেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর