বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করে গ্রাহকদের শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বাহিনীটি বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা করে আসছিলেন।
তারা হলেন কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যানের অন্যতম সহযোগী এবং প্রকল্প পরিচালক মো. শাকিল আহম্মেদ, চান মিয়া, এ কে আজাদ, তাজুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন খান, আব্দুস ছাত্তার মো. মাসুম বিল্লা, টিটু মিয়া ও আতিকুর রহমান।
র্যাব বলছে, সোম ও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মিরপুরের নান্নু সুপার মাকের্টে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় সভাপতি জসিমসহ সমিতির কার্যকরী কমিটির অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।’
অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, পলাতক জসিম উদ্দিনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করেছেন। জসিম আগে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করতেন।
তিনি জানান, প্রকল্প পরিচালক শাকিল আহম্মেদ টঙ্গী কলেজ থেকে অনার্স পাস করেন। ২০১৫ সালে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটডে যোগ দেন তিনি।
র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় ২০০৩ সালে জসিম কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন পায়। ২০১৩ সালে সমিতিটির পুনর্নিবন্ধন হয়। বেশি মুনাফার লোভে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২৫-৩০ হাজার সদস্য গ্রাহক সংগ্রহ করে জসিমের কর্মীরা। এরা ডিপিএস ও এফডিআরের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে। এর পরিমাণ আনুমানিক শতকোটির বেশি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা রাজধানীর মিরপুরে বস্তি এলাকার গার্মেন্টস কর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। পরে অল্প সময়ে মাসিক মেয়াদ শেষে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও ডিপিএস করাত। প্রতি গ্রাহক সংগ্রহের জন্য কর্মীদের নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেয়া হতো।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তারা প্রলোভন দেখাত, প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি একটি ডিপিএসে মাসে ১ হাজার টাকা করে বছরে ১২ হাজার টাকা জমা দেয়, তবে পাঁচ বছরে ৬০ হাজার টাকা জমা হবে। মেয়াদ শেষে তাকে ৯০ হাজার টাকা দেয়া হবে এবং সদস্য সংগ্রহকারী ব্যক্তি প্রথম এক বছর প্রতি মাসে ২০০ টাকা এবং পরবর্তী চার বছর প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে লভ্যাংশ পাবে।
‘আবার কোম্পানির কোনো সদস্য যদি নতুন কোনো সদস্যকে এক লাখ টাকার এফডিআর করাতে পারে, তাহলে সদস্য সংগ্রহকারীকে মাসে এক হাজার টাকা এবং এফডিআরকারী সদস্যকে মাসে দুই হাজার টাকা দেয়ার প্রলোভন দিত। বাংলাদেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন মুনাফা দিতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘সমিতির কিস্তির টাকা আদায়ে গ্রাহকদের ওপর চাপ দিত জসিমের কর্মীরা। ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হতো। তারা যদি সময়মতো ডিপিএসের টাকা না দিত, তাহলে মেয়াদ শেষে মুনাফা কম পাবে, এই ভয় দেখানো হতো। নিয়মিত টাকা না দিলে জরিমানাও করা হতো। এ কারণে ভুক্তভোগীরা সঠিক সময়ে ডিপিএসের টাকা জমা করত।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এভাবে টাকা সংগ্রহের পরও গ্রাহকদের নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়া হতো না এবং ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হলেও পাওনা টাকা পরিশোধ করা হতো না। টাকা চাইতে গেলে গ্রাহকদের হুমকি-ধমকি, মারধর করা ও মামলার ভয় দেখানো হতো।’
তিনি বলেন, ‘জসিমের নির্দেশে গ্রেপ্তার শাকিল ও চান মিয়া ভুক্তভোগীদের মারধরসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’