ফরিদপুরে বিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে তরুণীকে ধর্ষণ ও পুড়িয়ে হত্যার দায়ে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তার ভাইকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্বপন পাল নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন খান ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সুমন খানের বাড়ি আলফাডাঙ্গা উপজেলার ধলাইরচর গ্রামে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শাহাবুদ্দিন ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে পরিবার থেকে নাকচ করে দেয়। এরপর তিনি তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে আবারও ওই মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। এরপর মেয়েটিকে তার পরিবার বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার কালিকাবাড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
শাহাবুদ্দিন সেখানে গিয়ে সই করা কাগজ দেখিয়ে দাবি করেন, তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করেছেন। এরপর আলফাডাঙ্গা এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। প্রায় এক মাস পর ওই তরুণীর কাছে শিকার করেন, মেয়েটির পরিবার বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি প্রতিশোধ হিসেবে বিয়ের ভুয়া কাগজ এনেছিলেন।
এরপর ২০১১ সালের ২০ জুন মেয়েটি বাড়ি ফিরে গিয়ে তার বাবাকে বিষয়টি জানান। ২৭ জুন শাহাবুদ্দিনের মা মেয়েটিকে তাদের বাড়িতে ডাকেন। এরপর প্রথমে শাহাবুদ্দিন মেয়েটির গায়ে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তার ভাই সুমন লাঠি দিয়ে পেটান।
পরিবারের সদস্যরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ১১ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে তিনি ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসককে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ ও তাকে পুড়িয়ে, পিটিয়ে আহত করার কথা জানিয়ে যান।
মেয়েটির বাবা এ ঘটনায় শাহাবুদ্দিন, তার ভাই সুমন খান, সুমনের স্ত্রী ঝুমা বেগম ও মা আছিয়া বেগমকে আসামি করে মামলা করেন।
সে বছরের ২৯ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গা সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম চারজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
আইনজীবী স্বপন পাল বলেন, ‘আছিয়া বেগম ও ঝুমার অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। শাহাবুদ্দিনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও সুমনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। একই সঙ্গে দুই ভাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় দুই ভাই আদালতে হাজির ছিলেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। ন্যায়বিচারের জন্য আমরা হাইকোর্টে যাব।’