কুষ্টিয়ায় এক দরবারে ভক্ত হত্যা মামলায় প্রধান আসামি পিরের জায়গায় অন্য কেউ আত্মসমর্পণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলার সাক্ষীরা আদালতকে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তিকে মূল আসামি নয়।
জেলার দৌলতপুর আমলি আদালতে সোমবার গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আনা হলে সাক্ষীরা তাকে ভুয়া আসামি বলে শনাক্ত করেন।
ওই ঘটনার পর আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের কাছে মূল আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রও চাওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার চরদিয়ার কল্যাণপুর দরবার শরীফে ভক্ত রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে মোবাইল চুরির অভিযোগে আটক করে দরবারের লোকজন। পরে তাকে দরবারের বাগানে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত রাশেদ দৌলতপুর উপজেলার হরিণগাছী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি ওই দরবার শরীফের পির সৈয়দ তাছের আহমেদের মুরিদ ছিলেন। ঘটনার ৪-৫ মাস আগে থেকে তিনি দরবারে বসবাস করা শুরু করেন।
এ ঘটনায় রাশেদের বাবা আব্দুর রাজ্জাক পির তাছেরকে প্রধান আসামি করে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় পুলিশ ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। তবে দৌলতপুর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা আসামি পির তাছেরসহ তার অন্য ভক্ত-অনুসারীরা আত্মগোপনে যান।
সবশেষ গত ১৭ অক্টোবর পির তাছের হিসেবে একজন কুষ্টিয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
মামলার সাক্ষী রেজা নামে একজন জানান, সোমবার তাছেরকে আদালতে হাজির করা হলে তারা (সাক্ষীরা) দেখে ওই ব্যক্তি প্রকৃত তাছের নন বলে আদালতকে জানান।
তার দাবি, আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তি ওই দরবার শরীফেরই একজন ভক্ত।
মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক সেলিম জানান, তাছেরের বদলে অন্য কাউকে আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাক্ষীরা। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড দেন।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, আদালতে যিনি তাছের হিসেবে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি প্রকৃত তাছের নন; অন্য কেউ। বুধবার থেকে আসামির রিমান্ড শুরু হবে।
আদালত থেকে জানা যায়, আত্মসমর্পণের সময় তাছের আদালতে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেন। তবে সাক্ষীরা জানিয়েছেন, তাছেরের ছবির জায়গায় কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ব্যক্তির ছবি বসিয়ে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জজ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনুপ কুমার নন্দী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালত নির্বাচন কমিশনের কাছে তাছেরের জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়েছে।