মুজিব জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন। বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের আরও বেশি অংশগ্রহণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করাই এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে সম্মেলনটি মঙ্গলবার থেকে চলবে আগামী ১ নভেম্বর পর্যন্ত। এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশসহ ৩৮টি দেশের ৫৫২টি কোম্পানি।
‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক এ ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের যোগাযোগের সেতু হিসেবে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ।
এ সম্মেলনের লক্ষ্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের সক্ষমতা তুলে ধরা এবং আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।
সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, ডিসিসিআই সভাপতি রেজওয়ান রাহমানসহ আরও অনেকে।
সম্মেলনে মোট ৬টি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হবে। এতে সংশ্লিষ্ট খাতের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন। এসব ওয়েবিনারে জ্বালানি, তথ্য প্রযুক্তি, চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, অটোমোটিভ অ্যান্ড লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, পাট ও বস্ত্র, খুচরা ব্যবসা এসব খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।
সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় ব্যবসা সহায়ক দেশ, বিনিয়োগ সহায়ক দেশ। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণকারী দেশও। এই বিনিয়োগ টানতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন দুটি ডিপ্লোমেসি নিয়ে কাজ করছে। এর একটি হচ্ছে ইকনোমিক ডিপ্লোমেসি, যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন, বাজার দখল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুল্ক সুবিধা আদায়সহ বহুমুখী উন্নয়ন তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
‘অন্যটি হচ্ছে পাবলিক ডিপ্লোমেসি, যার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পণ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা হচ্ছে।’
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের ভিশনারি লিডার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে সব সময়ই বৈদেশিক বিনিয়োগ বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। কারণ বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তির স্থানান্তর হয়, টেকসই উন্নয়ন হয় এবং একটি বৈশ্বিক সংযোগ তৈরি হয়। এজন্য দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন।’
তিনি জানান, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশ। করোনা মহামারির সময়েও দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রয়েছে। দেশের মানুষের ভোগ ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। মুদ্রামান স্থিতিশীল রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান দাতা সংস্থার পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের অগ্রগতি উঠে আসছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের কাছে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা মিলবে। দেশে প্রত্যাশিত বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে সহায়ক হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশ। এই উত্তরণ মসৃণ করতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ দরকার। দেশে যে মানব সম্পদ রয়েছে তার দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিখাত বেশি মাত্রায় তৈরি পোশাকনির্ভর। এখন সময় এসেছে অন্যান্য খাতগুলোকে নিয়ে কাজ করার। সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে সেই চেষ্টাই করছে। দেশের নতুন নতুন খাত সম্প্রসারণ ও সম্ভাবনা জাগাচ্ছে। বাণিজ্য সম্মেলনে সম্ভাবনাময় খাতের ওপর যে আলোচনা হবে, তা আমাদের এই খাতগুলোতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসতে সহায়তা করবে।’
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, ‘এ মেলার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তার মধ্যে যোগাযোগ হবে, যা আমাদের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।’