করোনার সময় পাইলটদের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলটরা চুক্তির অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তা প্রত্যাহার করেছেন।
বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। সেখানে পরিচালকরাও ছিলেন। সবার সঙ্গে বাপার নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে সর্বসম্মত ভাবে সকলেই একমত হয়েছেন, আমাদের যে ওভারসিজ অ্যালায়েন্স যেটা আমাদের বেতনের অংশ, এটি আগামী শনিবারের বোর্ড মিটিংয়ে তোলা হবে। সেখানে এটি সমন্বয় করে দেয়া হবে বলে আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
‘এটা একটা মোটামুটি কনক্লুশনে আমরা আসতে পেরেছি। এ কারণে আমাদের ফ্লাইটগুলো, আমাদের সবারই ৭৫ ঘণ্টা ফ্লাইং আওয়ার হয়ে গেছে। মাসের কোটা আমরা ফিলআপ করেছি, তারপরেও আমরা ফ্লাইটগুলো করে দেব। অর্থাৎ চুক্তির বাহিরে যে ফ্লাইটগুলো সেগুলো আমরা চালাব আজ থেকে। শনিবারের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি।’
গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর ব্যয় সংকোচন করতে অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে পাইলটদেরও বেতন কাটছিল বিমান কর্তৃপক্ষ।
সে জন্য এর আগে, গত জুলাইয়ে একবার চুক্তির বাহিরে ফ্লাইট চালাতে অস্বীকৃতি জানায় পাইলটরা। তবে সে সময় বিমান কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তারা।
গত তিন মাসেও কর্তৃপক্ষ বেতন কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসায় সোমবার থেকে আবারও চুক্তির অতিরিক্ত ফ্লাইট চালানো বন্ধ করে দেয় বিমানের পাইলটরা। এতে মধ্যপ্রাচ্যগামী অন্তত দুটি ফ্লাইটের সিডিউল ওলট-পালট করতে হয় বিমান কর্তৃপক্ষকে। ভোগান্তিতে পড়েন ফ্লাইট দুটির শতাধিক যাত্রী।
বেতন কাটা নিয়ে বিমানের আদেশে বলা হয়, বিমানে কর্মরত ‘কর্মকর্তা’ এবং যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর, জুলাই মাসে তাদের কোনো বেতন কাটা হবে না। তবে যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স পাঁচ থেকে দশ বছর, জুলাই মাসে তাদের বেতন থেকে ৫ শতাংশ এবং যারা দশ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন, তাদের ২৫ শতাংশ কাটা হবে। এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন পাইলটরা।
বিমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পাইলটদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স পাঁচ বছরের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ে তাদের বেতন ২ লাখ ৬ হাজার ৮৪ টাকা। যাদের চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর, তারা ওভারসিজ ভাতা হিসেবে অতিরিক্ত পান ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এতে তাদের বেতন হয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
যাদের চাকরির বয়স ১০ থেকে ২০ বছর, তাদের বেতন ওভারসিজ ভাতাসহ ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর যাদের চাকরির বয়স এর চেয়ে বেশি, তারা পান ১২ লাখ ১ হাজার টাকা।
এ ছাড়া চুক্তির অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করলে তাদের আলাদা করে দেয়া হয় প্রোডাক্টিভিটি অ্যালাওয়েন্স।
আগে পাইলটদের নির্দিষ্ট হারে যে ওভারসিজ ভাতা দেয়া হতো, সেটি করোনায় আয় কমে যাওয়ায় পরিবর্তন করে বর্তমানে ফ্লাইং ঘণ্টা হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বোর্ড।
বর্তমানে বিমানে সব মিলিয়ে ১৫৭ জন পাইলট কর্মরত রয়েছেন। বাপার সঙ্গে বিমানের যে চুক্তি, সেটি অনুযায়ী একজন পাইলটের দৈনিক সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা কাজ করার কথা। সপ্তাহে একজন পাইলট কাজ করবেন সর্বোচ্চ ৭৫ ঘণ্টা। এর বাইরেও তিনি সপ্তাহে দুদিন ছুটি পাবেন।