হায়ার কিলারদের (ভাড়াটে খুনি) আমরা ছাড়ি না। এসব খুনিদের বিষয়ে আমাদের কোনো ছাড় নেই। দেশে ভাড়াটে খুনি পাওয়ার বিষয়টি বিপজ্জনক।
১৪ বছর আগে ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্ত্রী হত্যার মামলার আসামি ভাড়াটে খুনি মিজানুর রহমানের আপিল শুনানির সময় মঙ্গলবার এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
পরে আদালত আসামি মিজানুর রহমানের আপিল খারিজ করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
আদালতে মিজানুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ আশরাফ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
আইনজীবী মুহাম্মদ আশরাফ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাহমিনা শারমিন তানিয়া হত্যা মামলায় তার স্বামী জাহিদ হাসান জুয়েল, শাহিন আলম শাহিন ও মিজানুর রহমানকে বিচারিক আদালত ফাঁসির আদেশ দেয়। পরে সেটি হাইকোর্টও বহাল রাখেন।
‘এরপর আমরা মিজানুর রহমানের পক্ষে আপিল করলে আজকে সেটির শুনানি হয়। শুনানি শেষে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে ক্লায়েন্ট চাইলে রিভিউ করব।’
এ মামলার আরেক আসামি নিহত তানিয়ার স্বামী জাহিদ হাসান জুয়েলের মৃত্যুদণ্ড ২০১৭ সালে বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এছাড়া গাড়ি চালক শাহিনের জেল আপিল শুনানির জন্য বুধবার আপিল বিভাগের তালিকায় আসবে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি স্ত্রী তানিয়াকে নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যান জাহিদ। ৩০ জানুয়ারি সেখান থেকে ফেরার পথে রাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাজপাড়া এলাকায় গাড়িটি স্বামী জাহিদের পাতানো ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে।
এতে বলা হয়েছে, ছিনতাইকারী সেজে ভাড়াটে খুনি মিজান, স্বামী জাহিদ ও গাড়িচালক শাহিন গাড়ির ভেতর তানিয়াকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিতের ১০ মাসের শিশুসন্তানসহ তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায় আসামিরা।
মামলায় বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে তারা কাশেম নামের একজনের ভুয়া পরিচয়পত্র ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তানিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরদিন ৩১ জানুয়ারি তানিয়ার ভাই রায়হান গফুর বাদী হয়ে জাহিদ ও কাশেমের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুইজনকে আসামি করে পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ৩০ এপ্রিল পুলিশ জাহিদ, শাহিন ও মিজানের নামে অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে আসামিরা গ্রেপ্তার হয়ে ঘটনার বিষয়ে জবানবন্দি দেয়।
মামলায় দীর্ঘ বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর জেলা ও দায়রা জজ আদালত তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করে। আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে ২০১২ সালের ৮ জুলাই হাইকোর্টও তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
এরপর জাহিদ ও মিজানুর রহমান আপিল বিভাগের আবেদন করেন। আর শাহিনের জেল আপিল হয়।
এর মধ্যে স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকায় স্বামী জাহিদ হাসান জুয়েলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৭ সালে রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
মঙ্গলবারের রায়ে ভাড়াটে খুনি মিজানুর রহমানের ফাঁসি বহাল থাকল। এখন বাকি রইল গাড়িচালক শাহিন আলম শাহিনের রায়। তার জেল আপিল বুধবার শোনা হবে বলে জানিয়েছে আপিল বিভাগ।