গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়া ও আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিকে বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়েই নিজেদের কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় উচ্চ আদালতের করে দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের প্রধান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ে মঙ্গলবার প্রথম সভা করেছে এই পরিচালনা বোর্ড। এর মধ্য দিয়ে কার্যালয়ের দখল বুঝে নিয়েছেন বলেও নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে বাঁচানো যায়। আমরা অনেক খোঁজখবর পেয়েছি। অনেক ইনফরমেশন পেয়েছি। অনেক কর্মকর্তার নাম পেয়েছি। সবাইকে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
ইভ্যালির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকার সময় মো. রাসেলের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণের পাশাপাশি অর্থ পাচারের অভিযোগও পেয়েছেন বর্তমান পরিচালনা বোর্ড।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমরা এই খবরও পেয়েছি যে রাসেল বারবার বিদেশে গিয়েছেন। বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। সেই টাকাগুলোর খবর করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। সোজা কথা কাউকে ছাড়ব না।’
বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আগের কর্ণধার রাসেলের সঙ্গে বর্তমান বোর্ড যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে বলে খবর এসেছে। এতে ভীষণ চটেছেন বোর্ড প্রধান।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি, রাসেলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের কোনো প্রশ্নই আসতে পারে না। বরং উল্টো রাসেলের শ্যালিকাসহ আর কারা আছে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা আমরা করছি। তারা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরা কত পান না পান, সেগুলো তো আমার হিসাব করতে হবে। এদের কত সম্পদ আছে, সেটা হিসাব করতে হবে। এগুলো অডিট করার পর এসব বিষয় আসবে। এর জন্য অনেক সময় লাগবে।’
‘গ্রাহকের অর্থ যতটা সম্ভব ফেরত দেয়া যায়’ সেই চেষ্টাটা থাকবেও বলেও জানান ইভ্যালি পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের প্রধান এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
‘আতঙ্কিত হবেন না’
বৈঠকের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি নিয়ে আতঙ্কিত বা হতাশ না হয়ে আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় হাইকোর্টের করে দেয়া বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে মঙ্গলবার এক স্ট্যাটাসে তিনি এ পরামর্শ দেন।
তবে স্ট্যাটাসের কোথাও সরাসরি ‘ইভ্যালি’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।
তিনি লিখেছেন, ‘যা কিছু দেখবেন শুনবেন জানবেন, আতঙ্কিত বা হতাশ হবেন না। আস্থা বা বিশ্বাস রাখুন, অপেক্ষা করুন। কষ্ট যা হবে, আমার হবে। হয়তো তিন গুণ কষ্ট বেড়ে যাবে, এই যা।’
আগামীতে যা হবে সেখানেও কোনো প্রকার অনিয়ম হবে না বলে আশ্বস্ত করে মাহবুব কবীর মিলন লিখেছেন, ‘যা হবে বিন্দু পরিমাণ বিচ্যুতি বা অনিয়ম বা ম্যানিপুলেশন থাকবে না। সময় দিন। অপেক্ষা করুন।’
ইভ্যালির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারার অভিযোগ ছিল অনেক দিন ধরে। এসবের মাঝে গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এরপর গুলশান থানায় করা অর্থ আত্মসাৎ মামলায় তাদের তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। এই মামলায় রিমান্ড শেষে ধানমন্ডি থানায় করা অর্থ আত্মসাতের অপর এক মামলায় রাসেলকে ফের রিমান্ডে পাঠানো হয়। আসামি দুজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।