মাত্র ৫০০ ডলারেই নিজের কন্যাকে বেচে দিলেন আফগান বাবা-মা। তাদের কাছে এ ছাড়া আর কোনো উপায়ই ছিল না।
আফগানিস্তানের হেরাতে ঘটেছে হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি। সম্প্রতি বিবিসির সাংবাদিক যোগিতা লিমাইয়ি এই অঞ্চলটিতে খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তার ধারণ করা একটি ভিডিও চিত্রে উঠে এসেছে দেশটির কিছু মর্মান্তিক চিত্র।
সোমবার বিবিসিতে প্রকাশিত সেই ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুতেই দেখা যায়, হেরাতের একটি হাসপাতালের চিত্র। একটি শয্যায় শুয়ে আছে ছয় মাস বয়সী আফগান শিশু উসমান। ভালো করে পৃথিবী দেখার আগেই সে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। অপুষ্টির জন্য কঙ্কালসার তার শরীর। বেঁচে আছে কোনোক্রমে। পাশের কক্ষে তার মতোই অবস্থা তার যমজ ভাইয়েরও।
বাবার বেকারত্বই তাদের এমন পরিণতির জন্য দায়ী। আরও অসংখ্য আফগানের মতো উসমানের বাবাও কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই অনাহার আর অর্ধাহারে দিন কাটছে তার পরিবারের। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে সদ্য জন্ম নেয়া তার দুই শিশুর ওপর।
যমজ শিশু দুটির মা দুঃখ করে বলছিলেন, ‘কোনো টাকা নেই বলে আমার বাচ্চা দুটি মরে যাচ্ছে।’ আফগানিস্তানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানান তিনি।
বিগত বছরগুলোতে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ছিল মূলত বিদেশি সাহায্যনির্ভর। কিন্তু তালেবানরা ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে।
যে হাসপাতালটিতে যোগিতা গিয়েছিলেন সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সরা বেতন পান না গত কয়েক মাস ধরে। চিকিৎসা সরঞ্জামাদি কেনার মতো অর্থও নেই তাদের কাছে। এর মধ্যেই হাসপাতালটিতে একের পর এক কঙ্কালসার শিশুকে নিয়ে আসছেন তাদের মা-বাবারা।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হেরাতের সাধারণ মানুষের দুর্দশা নিজ চোখে দেখতে যান যোগিতা। তখনই জানতে পারেন মাত্র ৫০০ ডলারে একটি কন্যাশিশুকে বিক্রি করে দেয়ার ঘটনাটি।
শিশুটির মা বলেন, ‘আমার অন্য বাচ্চাগুলো খাবারের অভাবে মরে যাচ্ছে। তাই মেয়েটাকে বিক্রি করে দিলাম।’
শিশুটির বাবা ময়লা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু এখন তার এক পয়সাও আয় নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষুধায় ভুগছি। এই মুহূর্তে ঘরে কোনো ময়দা কিংবা তেলও নেই। আমাদের আর কিছুই নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জানি না আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। তবে এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।’
শিশুটি এখনও তার মা-বাবার কাছেই আছে। যখনই সে হাঁটতে শিখবে তখনই তাকে নিয়ে যাবেন, যিনি কিনেছেন। অর্ধেক অর্থ ইতিমধ্যেই তিনি পরিশোধ করেছেন। বাকি অর্থ আগামী কয়েক মাসে পরিশোধ করবেন।
যে ব্যক্তি শিশুটিকে কিনে নিচ্ছেন তিনি জানিয়েছেন, নিজের ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেবেন। কিন্তু আসলে কী করবেন তা কেউ জানে না।
বিবিসিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিজের টুইটার ওয়ালে পোস্ট করেছেন যোগিতা। এই পোস্টের নিচে কমেন্ট করে বিভিন্ন দেশের মানুষ পরিবারটিকে সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু যোগিতা জানান, ওই এলাকাটিতে সন্তান বিক্রি করার ঘটনা এটিই একমাত্র নয়। ক্ষুধার জ্বালায় আরও অসংখ্য ছেলে-মেয়েকে বিক্রি করে দিচ্ছেন তাদের বাবা-মা।