সাম্প্রদায়িক হামলা রুখতে প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হওয়াসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
দাবিগুলো হলো সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, অতীতের ঘটনার দ্রুত বিচার করা, সাম্প্রদায়িক হামলা ঠেকাতে প্রশাসনের আরও বেশি তৎপর হওয়া, সাম্প্রতিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর এবং উপাসনালয় দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করা; মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ শিক্ষাব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, আবহমান বাংলার সংস্কৃতিচর্চায় তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নেয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও উসকানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক সম্প্রীতি সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানান সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সমাবেশের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যখন যেখানে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে, সেখানেই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সেদিকেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে।’
উপাচার্য বলেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা। যদি রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতাই হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলসমূহ যারা অন্তত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনায় বিশ্বাস করেন, সেই মানুষগুলো সহমত পোষণ করে একই মঞ্চে আসতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও আমাদের সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্য সমাবেশ করতে হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সব সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হওয়া উচিত।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘এই হামলা মন্দির কিংবা একটি সম্প্রদায়ের ওপর নয়, এই হামলা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর, অসাম্প্রদায়িকতার ওপর। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য বীর শহীদরা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, সে জন্য শুভবোধ সম্পন্ন সকলকে একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই হামলা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ধরনের হামলার মাধ্যমে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে।’
অধ্যাপক মাহবুব আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মেলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরীসহ অনেকে।
সম্প্রীতি সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রজন্ম একাত্তর, উদীচী, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (ঢাকা, বাংলাদেশ), বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ, অপরাজেয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, গৌরব ৭১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সমিতি, ইউনিটি ফর ইয়াং জার্নালিস্ট, প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদসহ ৮৯টি সংগঠন।