নতুন বছরের শুরুতেই দেশের আকাশে পাখা মেলতে পারে নতুন দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস। এগুলোর নাম হলো ফ্লাই ঢাকা ও এয়ার অ্যাসট্রা।
এর মধ্যে একটিকে ইতিমধ্যে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আরেকটির এনওসিও খুব শিগগিরই হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে বেবিচক।
এ দুটি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলে দেশে সক্রিয় বেসরকারি এয়ারলাইনসের সংখ্যা দাঁড়াবে চার। আর এর ফলে এভিয়েশন খাতে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের সদস্য চৌধুরী এম জিয়া উল কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুটি এয়ারলাইনস এনওসির জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ফ্লাই ঢাকার আবেদন যাচাই-বাছাই করে তাদের এনওসি দেয়া হয়েছে। এয়ার অ্যাসট্রার আবদেন আমরা যাচাই-বাছাই করছি। খুব শিগগির হয়তো তাদেরও এনওসি দেয়া হবে।’
এনওসি পাওয়া ফ্লাই ঢাকার মূল মালিকানায় রয়েছেন সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার সাথে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিনিয়োগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিতে। আর এনওসির অপেক্ষায় থাকা এয়ার অ্যাসট্রার মালিকানায় রয়েছেন এক জাপান প্রবাসী ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এনওসি পাওয়ার পরেই যে এয়ারলাইনস দুটি ফ্লাইট শুরু করতে পারবে, তা নয়। তাদের আরও বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে এনওসি পাওয়ার কারণে উড়োজাহাজ ভাড়ায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করা সহজ হবে।
খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়ার কথা জানিয়েছেন ফ্লাই ঢাকার এক কর্মকর্তা।
এয়ার অ্যাসট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এনওসি পাওয়ার পরে চারটি লম্বা প্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে এয়ারওর্দিনেস সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। সব কিছু যদি ঠিক থাকে, তাহলে হয়তো আগামী বছরের জানুয়ারিতেই আমরা আকাশে পাখা মেলতে পারব।’
বেবিচকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এয়ারলাইনস ফ্লাইট শুরুর পর প্রথম এক বছর আবশ্যিকভাবে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক বছর পর আন্তর্জাতিক গন্তব্যে উড়ালের অনুমতি চাইতে পারে এয়ারলাইনস।
নতুন দুই এয়ারলাইনসের কার্যক্রম শুরুর প্রক্রিয়াকে এভিয়েশন খাতের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর দেশের এভিয়েশনের বাজার যেভাবে বাড়ছে, তাতে ক্যাপাসিটি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। দুটি এয়ারলাইনস যুক্ত হওয়ার মানে আরও ফ্লাইট যুক্ত হওয়া, পাশাপাশি ক্যাপাসিটি বেড়ে যাওয়া।
‘এর ফলে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও ভালো হবে। এখন প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ আকাশপথে ভ্রমণ করেন, এর ফলে এটি হয়তো ২৫ লাখ হবে।’
তবে এ ক্ষেত্রে এয়ারলাইনসগুলোর সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এ টি এম নজরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সংকট হবে পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারের। পাশাপাশি আগামী ডিসেম্বরে জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা আছে। এটিও তাদের মাথায় রাখতে হবে। কয়েক বছর লাভের আশায় না থেকে যাত্রীদের আস্থা অর্জনেই মনোযোগী হওয়া উচিত।’
গত ২৫ বছরে দেশে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলেও এখন টিকে আছে মাত্র দুটি। এ সময়ের মধ্যে একে একে পাখা গুটিয়েছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়্যাল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইনস, বেস্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ার।
সবশেষ করোনার মধ্যে গত বছরের মার্চ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে আরেকটি এয়ারলাইনস রিজেন্ট এয়ার। কয়েক দফা চালুর কথা বললেও আর ফ্লাইটে ফেরেনি এয়ারলাইনসটি। বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে জিএমজি, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চালাত।
দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়াও ফ্লাইটে রয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা ও নভো এয়ার।